ভুড়ি কমানোর খাবার এবং ভুড়ি কমানোর ব্যায়াম
প্রিয় পাঠক আপনি কি ভুড়ি কমানোর সহজ উপায় , ভুড়ি কমানোর খাবার এবং
ভুড়ি কমানোর ব্যায়াম সম্বন্ধে জানতে চাচ্ছেন কিন্তু সঠিক কোন তথ্য খুঁজে
পাচ্ছেন না ? চিন্তার কোন কারণ নেই কারণ, আমরা আপনাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে
জানাব,ভুড়ি কমানোর সহজ উপায় , ভুড়ি কমানোর খাবার এবং ভুড়ি কমানোর
ব্যায়াম সহ ভুড়ি কমানোর বিস্তারিত তথ্য।
ভুঁড়ি বাড়লে যেমন সৌন্দর্য নষ্ট করে, তেমনি চলাফেরাতেও অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
তাছাড়া অধিক ভুড়ি স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই আমরা অনেকেই চিন্তা করি
ভুরি কমানোর। কিন্তু চিন্তা করাটা যত সহজ, কাজ করা ঠিক ততটাই কঠিন। আর তাই
আপনাদের এই কাজ সহজ করার জন্য আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাব,ভুড়ি
কমানোর সহজ উপায় , ভুড়ি কমানোর খাবার এবং ভুড়ি কমানোর ব্যায়াম সহ
ভুড়ি কমানোর বিস্তারিত তথ্য।
ভূমিকা
আমরা অনেকেই ভুড়ি কমানোর জন্য সংকল্প বদ্ধ হই। কিন্তু ভুড়ি কমানোর সহজ
উপায়গুলো কি কি তা না জানার জন্য সফল হতে পারি না। আর তাই আমরা আপনাদের এই
আর্টিকালের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব, অতিরিক্ত ভুড়ি হওয়ার কারণ,ভুড়ি কমানোর
খাবার,ভুড়ি কমাতে কি কি খাবেন না, ভুড়ি কমানোর সহজ উপায় ও ভুড়ি কমানোর
ব্যায়াম এবং ভুরি কমানোর জন্য বর্জনীয় কাজ গুলো কি কি তার বিস্তারিত
তথ্য।
আর তাই আমরা আশা করছি আপনারা এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং
ভুড়ি কমানো সম্পর্কিত তথ্যগুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নিবেন।
অতিরিক্ত ভুড়ি হওয়ার কারণ
আমাদের ছোট ছোট অস্বাস্থ্যকর কিছু অভ্যাসের কারণে অতিরিক্ত ভুঁড়ি বা মেদ হয়। এই
মেদ পেট ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশে হওয়ার অন্যতম কারণ এই অস্বাস্থ্যকর
অভ্যাসগুলো। নিচে এরকমই কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস বা ভুড়ি হওয়ার কারণ দেওয়া
হল।
- কম চর্বি (লো-ফ্যাট) জাতীয় খাবার বা চর্বি ছাড়া (ফ্যাট-ফ্রি) খাবার খেলে মেদ বা ভুড়ি হতে পারে।
- অতিরিক্ত ঘুম অথবা কম ঘুমের ফলে মেদ বা ভুড়ি হতে পারে।
- দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেসনেসের কারণে হতে পারে। খাবারে অনিয়মের ফলে মেদ বা ভুঁড়ি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
- অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা তৈলাক্ত জাতীয় খাবার বেশি খেলে এটি হতে পারে।
- অলসতার মধ্যে সময় কাটালে অর্থাৎ শুয়ে বসে সময় কাটালে ভুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
- অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার এবং কোমল পানীয় খাবার ফলে ভুড়ি বা মেদ হয়।
- প্রয়োজনের অধিক খাবার খেলে মেদ বা ভুড়ি হতে পারে।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খেলে ভুঁড়ি বা মেদ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
- এছাড়াও অনেকের জিনগত কারণেও মেদ বা ভুড়ি হয়ে থাকে।
ভুড়ি কমানোর খাবার
কিছু খাবার আছে যে খাবারগুলো খেলে মানুষের অতিরিক্ত ভুড়ি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়
বা কমে যায়। যে ধরনের খাবার খেলে ভুঁড়ি কমে যায় তা নিচে দেওয়া হল।
- প্রতিদিন বেশি বেশি পানি খেতে হবে।
- বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
- নিয়মিতভাবে শাকসবজি খেতে হবে।
- অল্প পরিমাণ আদা ক্ষেত্র করে ভালোভাবে গরম করে নিয়ে খেলে ভুঁড়ি কমে যায়।
- প্রতিদিন টাটকা বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে হবে।
- এছাড়াও গ্রিন টি ভুঁড়ি বা মেদ কমাতে অনেক বড় সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে।
- চিনি ছাড়া লেবুর শরবত অথবা শুধু লেবু খেলে ভুঁড়ি কমে যায়।
- ঝাল জাতীয় খাবার বেশি খেলে ভুরি কমে যায়।
- এছাড়াও রসুনের কুয়া খালি পেটে অথবা বেটে খেলে ভুঁড়ি কমে যায়।
- এছাড়াও আখরোট, সামুদ্রিক মাছ ওমেগা ও কাঠবাদাম খেলে ভুড়ি কমে যায়।
- লাল চাল, ঢেঁকিতে ভাঙ্গানো চাল এবং লাল আটা ভুড়ি কমাতে সাহায্য করে।
ভুড়ি কমাতে কি কি খাবেন না
অতিরিক্ত ভুড়ি মানুষের সৌন্দর্য নষ্ট করে। আমরা অনেকেই জানি না যে, আমরা
প্রতিদিন যে খাবারগুলো খাই এর মধ্যে অনেক খাবার এর জন্য দায়ী। তাই চলুন দেখে নিই
কোন খাবারগুলো অতিরিক্ত ভুড়ির জন্য দায়ী।
- অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার এবং কোমল পানীয় খাবার ফলে ভুড়ি বা মেদ হয়।
- অতিরিক্ত প্রোটিন যেমন মাংস জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা।
- কিছু কিছু মসলা আছে যা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়।
- সাদা ভাত বা সাদা আটা খাওয়া যাবে না।
- অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় ভুড়ি বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে, তাই এটি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অতিরিক্ত ফার্স্ট ফুড বা ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খেলে ভুড়ি বা মেদ বাড়ে।
- খাবারে অনিয়ম বা রুটিন ছাড়া খাবার খেলে ভুড়ি বাড়ে।
- আবার যে কোন খাবার চাহিদার থেকে অতিরিক্ত খেলে ভুঁড়ি বাড়তে পারে।
ভুড়ি কমানোর সহজ উপায় ও ভুড়ি কমানোর ব্যায়াম
ভুড়ি পুরুষ এবং নারী উভয়েরই সৌন্দর্য নষ্ট করে। তাই যাদের ভুড়ি অতিরিক্ত
আছে তারা ভাবেন কিভাবে এটা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বা ওজন কমানো যায়। ঘরোয়া
কিছু ব্যায়াম বা সহজ নিয়ম আছে যা নিয়মিত মেনে চললে অতিরিক্ত ভুরি থেকে রক্ষা
পাওয়া যায়। এমনই কিছু সহজ নিয়ম বা ব্যায়াম নিচে আলোচনা করা হলো।
জগিংঃ ভুড়ি কমাতে জগিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি করার জন্য আপনাকে প্রথম এক
মিনিট জগিং করতে হবে এবং তারপরে ৩০ সেকেন্ড দৌড়াতে হবে এবং পুনরায় এক মিনিট
জগিং করতে হবে ও পরবর্তীতে আবারো ৩০ সেকেন্ড দৌড়াতে হবে। এভাবে নিয়মিত পাঁচ
মিনিট জগিং করতে হবে।
ব্রিস্ক ওয়াকিং বা দ্রুত হাটাঃ ব্রিস্ক ওয়াকিং বা দ্রুত হাটা শুধু ভুড়ি কমাতে সাহায্য করে না বরং যাদের
ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তাদের সমস্যা নিরাময় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এটির নিয়ম
হলো প্রথমে ধীরে ধীরে এক মিনিট হাটতে হবে তারপর আস্তে আস্তে গতি বাড়িয়ে ৩০
সেকেন্ড জোরে হাটতে হবে।
এরপর আবারো ধীরে ধীরে এক মিনিট হাঁটতে হবে এরপর পুনরায় আস্তে আস্তে গতি বাড়িয়ে
৩০ সেকেন্ড জোরে হাটতে হবে। এভাবে প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশ মিনিট ব্রিস্ক ওয়াকিং
বা দ্রুত হাঁটতে হবে।
সাইকেলিংঃ নিয়মিতভাবে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট সাইকেলিং করলে ঘুড়ি অনেক অংশই কমে যায়।
এছাড়াও এটি ঘরও ভাবে করতে চাইলে, প্রথমে আপনাকে সমান্তরাল অথবা এটি মেটে চিত
হয়ে শুয়ে দুই পা উঁচু করে যেভাবে সাইকেল চালাই ঠিক সেভাবে দুই পা দিয়ে
সাইকেলিং করতে হবে।
এভাবে নিয়মিত.১০ মিনিট ঘরোয়াভাবে সাইকেলিং করলে আপনার ভুড়ি অবশ্যই কমে যাবে।
এছাড়াও এই সেম উপায়ে আপনি আপনার দুই পা উপর দিকে তুলে রেখে ১০ সেকেন্ড ১০
সেকেন্ড করে ১০ থেকে ১৫ বার স্থির রাখলেও ভুড়ি কমে যায়।
ক্রাঞ্চঃ এটি করতে হলে আপনাকে চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে বুকের কাছে আনতে হবে।
এবং একি সাথে মাথার পেছনে হাত দিয়ে বডি বা শরীরকে উঠিয়ে হাঁটুর কাছাকাছি নিয়ে
আসতে হবে। হাঁটু এবং মাথা একসঙ্গে নিয়ে আসার সময় শ্বাস নিতে হবে এবং আগের
অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সময় শ্বাস ত্যাগ করতে হবে। এভাবে দিনে ১৫ থেকে ২০ বার
করতে হবে।
পেটের স্ট্রেচিংঃ সমতল স্থানে বো ম্যাটের ওপরে চিত হয়ে শুয়ে দুই হাত সোজা করে মাথার পেছনে
এবং একই সাথে পায়ের পাতা টানটান করে মেঝে ছোঁয়ার চেষ্টা করতে হবে। এবং এ সময়
শ্বাস স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। এর ফলে আপনার পেশীতে টান অনুভব করবে। এভাবে
প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মিনিট নিয়মিত পেটের স্ট্রেচিং করতে হবে। যা আপনার ভুরি বা
মেদকে কমাতে সাহায্য করে।
ফ্লাটার কিকঃ চিৎ হয়ে শুয়ে দুই হাত হিপের নিচে রেখে মাথা, কাঁধ এবং পা ধীরে ধীরে
উপরের দিকে উঠাতে হবে। এভাবে নিয়মিত ৮ থেকে ১০ বার দুই পা উপরে উঠা নামা করলে
পেটের ভুড়ি বা মেদ কমে যায়।
৯০ ডিগ্রী পাঃ চিত হয়ে শুয়ে হাতের তালু তালুর নিচে রেখে দুই পা জড়ো করে ৯০ ডিগ্রি
উপরে তুলে ১০ সেকেন্ড স্থির থাকতে হবে। এবং পাঁচ সোজা রেখে হাঁটু ভাজ না করে পা
নামাতে হবে। এভাবে দিনে ১৫ থেকে ২০বার করতে হবে। এবং একই উপায়ে দুই পা এবং দুই
হাত ডান দিকে এবং বাম দিকে পিঠ বরাবর নিয়ে যেতে হবে। এটিও দিনে ১৫ থেকেথ.২০ বার
করতে হবে।
ভুরি কমানোর জন্য বর্জনীয় কাজ
ভুড়ি বা মেদ কমানোর জন্য আমাদের নিয়মিত কিছু কাজ ফলো করতে হবে। এবং যে কাজগুলো
করলে ভুড়ি বা মেদ বাড়ে তা বর্জন করতে হবে। এমন কিছু কাজ যা আমাদের বর্জন করতে
হবে তার নিচে আলোচনা করা হলো।
- সর্বপ্রথম আমাদের জীবনধারার পরিবর্তন আনতে হবে। প্রত্যেকটি কাজ চলাফেরা সবকিছু রুটিন এর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এবং যে কাজগুলো করলে আমাদের মেদ বা ভুড়ি বাড়ে সে কাজগুলো বর্জন করতে হবে।
- খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। ভুড়ি বা মেদ বাড়তে সাহায্য করে এমন খাবার পরিহার করতে হবে।
- অলসতা কাটিয়ে বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে।
- কম ঘুম বা বেশি ঘুম বর্জন করতে হবে।
- উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়, চিনিযুক্ত খাবার এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বাহিরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
- বিভিন্ন চিন্তা বা স্ট্রেস অথবা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
- এবং সর্বোপরি মাংস যত কম খাওয়া যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমরা আপনাদের এই আর্টিকালের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি,
অতিরিক্ত ভুড়ি হওয়ার কারণ,ভুড়ি কমানোর খাবার,ভুড়ি কমাতে কি কি খাবেন না,
ভুড়ি কমানোর সহজ উপায় ও ভুড়ি কমানোর ব্যায়াম এবং ভুরি কমানোর জন্য
বর্জনীয় কাজ গুলো কি কি তার বিস্তারিত তথ্য।
তাই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে যদি আপনাদের কোন উপকার হয়ে থাকে অথবা ভালো লেগে
থাকে , তবে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি আপনারা আপনাদের বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার
করবেন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন।
ধন্যবাদ
Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url