গরুর কিছু পরিচিত রোগ এবং তার চিকিৎসা ও ঔষধ
প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলটি সাজিয়েছি গরুর কিছু পরিচিত রোগ এবং তার চিকিৎসা দিয়ে। যা আমাদের দেশের ছোট বড় সকল খামারি ভাই-বোনদের জন্য জানা প্রয়োজন। কারণ যে সকল খামারি ভাই-বোন গরু পালন করে তারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। আর তাই আজকের এই গরুর কিছু পরিচিত রোগ এবং তার চিকিৎসা সম্পর্কিত আর্টিকেলটি ওই সকল খামারি ভাই-বোনদের জন্য।আমাদের দেশে বর্তমানে বেকারত্বের হার অনেক বেশি।
কারণ শিক্ষিত দিন দিন বেড়েই চলেছে কিন্তু সে অনুযায়ী চাকরি নেই। আর তাই গরু পালন এই বেকারত্ব দূরীকরণে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এখন অনেক শিক্ষিত ভাই-বোনেরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে ছোট বড় গরু খামার করছেন এবং প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু এই গরু পালনে বর্তমানে বেশ কিছু রোগ যা খামারি ভাই-বোনদের বেশ চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে । আর তাই আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদের জানাবো গরুর কিছু পরিচিত রোগ এবং তার চিকিৎসা।
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব,গরুর পেট ফাঁপা রোগ,গরুর পেট ফাঁপা রোগের লক্ষণ,গরুর পেট ফাঁপা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার,গরুর জলাতঙ্ক রোগ,গরুর জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ,গরুর জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার,গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া,
গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার লক্ষণ,গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার চিকিৎসা,গরুর বদ হজম রোগ,গরুর বদ হজম রোগের লক্ষণ এবং গরুর বদ হজম রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কিত সকল তথ্য। তাই গরুর এই রোগগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি ভালো করে পড়ে নিন।
গরুর পেট ফাঁপা রোগ
পেট ফাঁপা মূলত গরুর একটি খাবার জনিত সমস্যা। অতিরিক্ত খাদ্য খেলে, গরুর গলায় কিছু আটকালে, রুমেনের গতিশক্তি কমে গেলে এবং বদহজম হলে মূলত গরুর পেট ফাঁপা রোগটি হয়ে থাকে। গরুর পেট ফাঁপা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও মাঝে মধ্যে এই সমস্যাটা এতটাই ভয়ানক হয় যে এর ফলে গরু মারাও যায়। তাই সবসময় মনে রাখতে হবে গরুর খাবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং বিচক্ষণতার সাথে গরুকে খেতে দিতে হবে।
গরুর পেট ফাঁপা রোগের লক্ষণ
গরুর পেট ফাঁপা রোগের লক্ষণ নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
- গরুর পেট ফাঁপলে বা পেটে গ্যাস হলে গরুর ছটফট করে।
- গরু খাবার দাবার বন্ধ করে দেয়।
- জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়।
- পেট অনেক বড় হয়ে যায় অর্থাৎ পেট ফুলে যায়।
- মুখ দিয়ে লালা পরে।
- অনেক সময় শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়।
- অনেক সময় জিহবা বের করে শ্বাস নেই।
- গরুর পেট ফাঁপার কারণে অনেক সময় গরু প্রস্রাব পায়খানা করা বন্ধ করে দেয়।
গরুর পেট ফাঁপা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
গরুর পেট ফাঁপা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার এবং গরু পেট ফাঁপলে কোন ঔষধ খাওয়াতে হয় তা যারা গরু পালেন তাদের সবারই জানা উচিত এবং সে ওষুধগুলো সবসময়ের জন্য খামারে রাখা উচিত। গরুর পেট ফাঁপলে যে ওষুধগুলো পেট ফাঁপা রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে সেগুলো হলো , যাইমোভেট ,বভি কেয়ার , ম্যাকভেট প্লাস , ব্লট স্টপ ভেট , রুমেইন প্লাস , জিরো ব্লট ভেট , ডিজিটন , নো ব্লট ভেট , ডিজি ম্যাক্স , রুমেনটন , রুমকিওর এবং বায়োকাড এক্সপি ইত্যাদি।
এছাড়াও গরুর খাবার দেওয়ার সময় সচেতনার সাথে খাবার দিতে হবে। যেন খাবারে কোন সমস্যা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গরুর ঘর সবসময় পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এবং এ ধরনের কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত পশু হাসপাতাল বা ভালো কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গরুর জলাতঙ্ক রোগ
গরুর জলাতঙ্ক রোগ একটি ভাইরাস জনিত মারাত্মক রোগ। এই রোগটি গরু বা গবাদি পশু ছাড়াও মানুষেরও হয়ে থাকে। জলাতঙ্ক রোগ কুকুর , শেয়াল এবং বাদুরের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে।
এ রোগ এতটাই মারাত্মক যে, এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে বেশিরভাগ পশুরই মৃত্যু হয়ে থাকে। এবং যে পশুর এই রোগটি হবে সে পশুর মুখের লালাতে এই রোগের জীবাণু থাকে। তাই কখনোই পশুর মুখে হাত দেওয়া যাবে না।
গরুর জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ
গরুর জলাতঙ্ক রোগ এর লক্ষণগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
- এ রোগের গরু আক্রান্ত হলে গরু প্রচুর পরিমাণে অশান্ত বা হিংস্র হয়ে ওঠে।
- সামনে যা পাই সেটা কে কামড়ানোর চেষ্টা করে।
- মোটা দড়ি বা রশি ছাড়া গরুকে আটকানো যায় না।
- গরু সব সময় তার কান খাড়া করে রাখে এবং চোখ বড় বড় করে রাখে।
- গরু পানি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় কিন্তু পানি খেতে পারে না।
গরুর জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
গরু জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার বলতে কিছুই নেই। গরু একবারে রোগে আক্রান্ত হওয়া মানে নিশ্চিত মৃত্যু। আর তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন কুকুর শিয়াল বা বাদুড় গরুকে না কামড়ায় । অথবা যেখানে গরু থাকে সেখানে যেন না প্রবেশ করতে পারে। তবে জলাতঙ্ক থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি প্রতিষেধক আছে যা হল পোশাক বিড়াল বা কুকুর হলে তাকে জলাতঙ্কের টিকা প্রদান করতে হবে।
অথবা বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করতে হবে। এছাড়া জলাতঙ্কে মৃত গবাদি পশু অবশ্যই মাটি গভীরভাবে গর্ত করে সেখানে পুতে ফেলতে হবে। অন্যথায় ওই মৃত গবাদি পশু থেকে অন্যান্য ভালো পশুকেও এই রোগ সংক্রমণ করতে পারে বা করবে।
গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া
গরু পালনের গরুর অনেক রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যা গুলোর মধ্যে গরু পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলো অন্যতম। গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া দ্রুত চিকিৎসা না করালে গরুর মারা যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাছাড়া অনেক সময় গরু পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার সাথে রক্ত আমাশয় বা আমাশয় দেখা দিতে পারে।
এই সমস্যাগুলো দেখা দিলে দ্রুত পশু হাসপাতাল অথবা ভালো কোন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। আর তাই নিচে বিস্তারিতভাবে আপনাদের জন্য গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার লক্ষণ এবং এর চিকিৎসা ও প্রতিকার গুলো দেওয়া হল।
গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার লক্ষণ
গরু পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়ার প্রধান লক্ষণ হল গরু ঘন ঘন পানির মত বা একদম নরম পায়খানা করবে। গরুর খাবারে অরুচি আসবে। অনেক সময় পায়খানার সাথে রক্ত আসতে পারে। এছাড়াও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে । অনেক সময় উৎপাদন কমে যায় এবং গরু শুকিয়ে যায়।
গরু পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার চিকিৎসা ও প্রতিকার
নিচে বিস্তারিতভাবে গরু পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া চিকিৎসা ও প্রতিকার গুলো আলোচনা করা হলো।
- গরুর পাতলা পায়খানা হলে সর্বপ্রথম গরুকে ইলেকট্রোলাইট এক প্যাকেট ২০ লিটার পানিতে মিশিয়ে সব সময় গরু পানি খাওয়ার পাত্রে রেখে দিতে হবে। যেন গরু দুর্বল না হয়ে পড়ে। তবে খেয়াল রাখতে হবে ইলেকট্রোলাইট মিশ্রিত পানি যেন ছয় ঘন্টার বেশি না রাখা যায় এবং পানিতে যেন কোন ধরনের জীবানু বা পোকামাকড় না পরে।
- গরুর পাতলা পায়খানা নিরাময়ে সালফা ডিন ভেট ট্যাবলেট অনেক বেশি কার্যকরী। প্রতি ৮০ কেজি ওজনের গরুর জন্য একটি করে দিনে তিনটি ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। এবং সাথে অবশ্যই দিনে ৩-৫ বার খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
- এছাড়াও ডায়রিয়া থাকাকালীন অবস্থায় গরুকে গরুর রুচি বৃদ্ধিকারী ঔষধ খাওয়াতে হবে।
- প্রতিদিন ৫০ এমএল করে দিনে দুইবার টোটাল ১০০ এম এল জিঙ্ক খাওয়াতে হবে।
- গরুর ঘর সবসময় পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- গরুর খাবার পরিবেশন এর আগে অবশ্যই দেখে শুনে খাবার পরিবেশন করতে হবে যেন কোন ধরনের ময়লা বা অস্বাস্থ্যকর খাবার গরু না খায়।
গরুর বদহজম রোগ
গরুর বদহজম রোগ একটি পরিচিত এবং জটিল রোগ। এই রোগটি যারা গরু পালেন প্রায় কম বেশি সবাই এর সম্মুখীন হয়েছেন। এ রোগের সঠিক চিকিৎসা এবং রোগ সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান না থাকলে এর ফলে গরু মারাও যেতে পারে। তাই চলুন দেখেনি গরুর বদহজম রোগের কারণ বা লক্ষণ গুলো কি এবং গরুর বদহজম রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার কি তার বিস্তারিত।
গরুর বদহজম রোগের লক্ষণ
নিচে বিস্তারিতভাবে গরুর বদহজম রোগের লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলো।
- গরুর বদহজম হলে গরু ছটফট করে।
- গরু খাবার দাবার বন্ধ করে দেয়।
- আক্রান্ত গরুটি বারবার বসে এবং ওঠে।
- জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়।
- পেট অনেক বড় হয়ে যায় অর্থাৎ পেট ফুলে যায়।
- মুখ দিয়ে লালা পরে।
- অনেক সময় শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়।
- অনেক সময় জিহবা বের করে শ্বাস নেই।
- গরুর বদ হজমের কারণে অনেক সময় গরু প্রস্রাব পায়খানা করা বন্ধ করে দেয়।
গরুর বদহজম রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
নিচে বিস্তারিতভাবে গরুর বদহজম রোগের চিকিৎসাও প্রতিকার গুলো আলোচনা করা হলো।
গরুর বদহজম রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার এবং গরুর বদ হজম হলে কোন ঔষধ খাওয়াতে হয় তা যারা গরু পালেন তাদের সবারই জানা উচিত এবং সে ওষুধগুলো সবসময়ের জন্য খামারে রাখা উচিত। গরুর বদহজম হলে যে ওষুধগুলো বদহজম রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে সেগুলো হলো_
যাইমোভেট ,বভি কেয়ার , ম্যাকভেট প্লাস , ব্লট স্টপ ভেট , রুমেইন প্লাস , জিরো ব্লট ভেট , ডিজিটন , নো ব্লট ভেট , ডিজি ম্যাক্স , রুমেনটন , রুমকিওর এবং বায়োকাড এক্সপি ইত্যাদি। এছাড়াও গরুর খাবার দেওয়ার সময় সচেতনার সাথে খাবার দিতে হবে। যেন খাবারে কোন সমস্যা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গরুর ঘর সবসময় পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এবং এ ধরনের কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত পশু হাসপাতাল বা ভালো কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক বৃন্দ এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি,গরুর পেট ফাঁপা রোগ,গরুর পেট ফাঁপা রোগের লক্ষণ,গরুর পেট ফাঁপা রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার,গরুর জলাতঙ্ক রোগ,গরুর জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ,গরুর জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার,গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া,গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার লক্ষণ,গরুর পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার চিকিৎসা,গরুর বদ হজম রোগ,গরুর বদ হজম রোগের লক্ষণ
এবং গরুর বদ হজম রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কিত সকল তথ্য। তাই এই আর্টিকেলটি আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে বা কোন উপকারে আসে তবে অবশ্যই, আপনারা আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটটির নিয়মিত ফলো করবেন।
ধন্যবাদ
Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url