শীতে কবুতরের পরিচর্যা ও পদক্ষেপ এবং কবুতর পালন পদ্ধতি
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব, কবুতর পালন পদ্ধতি , শীতে
কবুতরের পরিচর্যা ও পদক্ষেপ, চিকিৎসা এবং কবুতরকে সুস্থ রাখতে
করণীয় কি কি তার বিস্তারিত। কবুতর পালন পদ্ধতি বছরের অন্যান্য সময় মোটামুটি সহজ
হলেও শীতের সময় কবুতর পালন পদ্ধতি যদি কেউ সঠিকভাবে না জেনে থাকে তবে তার জন্য
অনেক কষ্টকর এবং কঠিন হবে। তাই চলুন শীতে কবুতরের পরিচর্যা ও পদক্ষেপ কি কি
নেওয়া উচিত এবং কবুতর পালন পদ্ধতি কি তার বিস্তারিত দেখে নিন।
কবুতরকে বলা হয় শান্তির প্রতীক। কেন কবুতরকে শান্তির প্রতীক বলা হয় তা হয়তো
সবাই না জানলেও যারা কবুতর পালন করেন তারা জানেন এবং বুঝতে পারেন। আর তাই আমরা
আপনাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানাবো শীতে কবুতরের পরিচর্যা ও পদক্ষেপ গুলো কি
কি এবং কবুতর পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
ভূমিকা
আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো কবুতর পালন পদ্ধতি, শীতে কবুতরের পরিচর্যা
এবং পদক্ষেপ, কবুতরের কোন সমস্যা দেখা দিলে তা নিরাময় অথবা চিকিৎসা কি দিতে হয়
এবং কবুতরের জাত সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য। আমাদের এই পোস্টটি ভালোমতো দেখলে বা
পড়লে কবুতরের এই বিষয়গুলি সম্বন্ধে আশা করি পূর্ণ ধারণা পেয়ে যাবেন।
কবুতর পালন পদ্ধতি
খুবই সহজ এবং নির্ভেজাল পদ্ধতিতে কবুতর পালন করা যায়। কবুতর প্রধানত তিনটি
উপায়ে পালন করা যায়।
মুক্ত উপায়ঃ মুক্ত উপায়ে পালন করলে আপনাকে শুধু কবুতরের ঘর নির্মাণ করতে হবে। সকাল
হলে কবুতরকে ছেড়ে দিবেন, সকাল ও বিকাল এই দুই বেলা কবুতরকে খেতে দিবেন, বাকি
সময় তারা সারাদিন এদিক ওদিক উড়ে বেড়াবে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে খাদ্য গ্রহণ
করবে। এবং বিকালে বা সন্ধ্যার আগে তারা তাদের ঘরে ফিরে আসবে। এই পদ্ধতিতে কবুতর
পালা সব থেকে সহজ।
অর্ধ মুক্ত উপায়ঃ অর্ধ মুক্ত উপায়ে কবুতর পালন করতে হলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা
এরিয়া,বাড়ির ছাদে নেট দিয়ে অথবা অন্য কোন উপায়ে ঘিরে দিতে হবে যেন কবুতর
বাহিরে বের না হতে পারে । এ পদ্ধতিতে আপনাকে যে জায়গাটি আপনি ঘিরে দিবেন সেখানে
কবুতর থাকার জন্য কবুতরের একটি ঘর নির্মাণ করতে হবে। এবং দুই থেকে তিনবার আপনাকে
পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিতে হবে।
আবদ্ধ উপায়ঃ খাঁচার মধ্যে অথবা ঘরের মধ্যে কবুতর পালন করাকে আবদ্ধ কবুতর পালন পদ্ধতি
বলে। তবে এ উপায়ে কবুতর পালন করলে আপনাকে ঘরের মধ্যে কবুতর থাকার জন্য বাসা এবং
খাঁচার মধ্যে কবুতরের বসার জন্য একটি বাসনা দিতে হয়। তবে এ উপায়ে কবুতর
তুলনামূল্য কম ডিম ও বাচ্চা করে।
এছাড়াও কবুতর পালার জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হল , আপনাকে কবুতরের সুষম খাবার সহ
খাদ্যের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এবং কবুতর রোগে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার পর্যাপ্ত
ব্যবস্থা রাখতে হবে।
কবুতরের ঘর কেমন হওয়া উচিত
কবুতর পালন পদ্ধতি জানার জন্য আপনাকে জানতে হবে কবুতরের ঘর কেমন হওয়া উচিত।
সেজন্য আপনি কোন জাতের কবুতর পালন করবেন তার ওপর নির্ভর করে আপনাকে কবুতরের ঘর
নির্মাণ করতে হবে। সাধারণত কবুতরের ঘর উঁচু স্থানে নির্মাণ করতে হয়। যেন কুকুর ও
বিড়াল সহ অন্যান্য প্রাণী কবুতরের ঘরে হানা দিতে না পারে। এছাড়াও এমন স্থানে
আপনাকে কবুতরের ঘর নির্মাণ করতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো এবং বাতাস চলাচল
করতে ।
খেয়াল রাখতে হবে যেন বৃষ্টির পানি, ঝড়ো বাতাস এবং শীতের দিনে ঠান্ডা কবুতরের
ঘরে প্রবেশ না করতে পারে। কবুতরের ঘর সাধারণত কাঠ বা বাস বা বেতঁ দ্বারা তৈরি করা
হয়। এছাড়াও টিন, নেট, চিকন রড এবং প্লাস্টিক দ্বারা তৈরি করা যায়। একজোড়া
কবুতরের জন্য ঘরের মাপ ৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৩০ সেন্টিমিটার প্রস্থ এবং ৩০
সেন্টিমিটার উচ্চতা করতে হয়। এছাড়াও ঘরে ঢোকার জন্য দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা
১০ সেন্টিমিটার মাপের দরজা তৈরি করতে হয়। এবং দরজা বরাবর .১০-১২ সেন্টিমিটার
মাপের একটি বারান্দা তৈরি করতে হয়।
যেন সহজে কবুতর তার ঘরে প্রবেশ করতে পারে। কবুতরের ঘরের সামনে কবুতরের খাবার এবং
পানি খাওয়ার জন্য পাত্র রাখতে হবে। কবুতর যখন ডিম দিবে তার কিছুদিন আগে কবুতরের
ঘরের সামনে বিভিন্ন ধরনের খরকুটা বা শুকনো ঘাস রেখে দিতে হবে। যেন কবুতর ডিম
দেওয়ার জন্য সুন্দর একটি জায়গা তৈরি করতে পারে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
হলো কবুতরের ঘর দক্ষিণমুখী হওয়া সব থেকে ভালো। দক্ষিণ মুখী হলে কবুতরের ঘরে
পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো এবং বাতাস পৌঁছাতে পারে। যার জন্য কবুতরের রোগ বালাই কম হয়।
কবুতরের জাত
পুরো পৃথিবীজুড়ে প্রায় ১২০ জাতের কবুতর পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে মাত্র
২০-৩০ প্রজাতির কবুতর আছে। আমাদের বাংলাদেশে কবুতরের জাতকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ
করা হয়। জাত দুটো হল_
- দেশি বা মাংশ উৎপাদন জাত
- ফেন্সি বা চিত্তবিনোদন জাত
দেশি বা মাংশ উৎপাদন জাতঃ দেশী বা মাংস উৎপাদনকারী জাতের কবুতর সাধারণত আমরা এদের বাচ্চা খাওয়ার
জন্য পালন করে থাকি। এ জাতের কবুতর খুব একটা বেশি আকর্ষণীয় বা সুন্দর হয় না।
এবং বড় হয় না। তবে এরা প্রচুর পরিমাণে বাচ্চা করে থাকে। যার জন্য এ জাতের কবুতর
বাজারে চাহিদাতে সবার শীর্ষে।
ফেন্সি বা চিত্তবিনোদন জাতঃ ফেন্সি বা চিত্তবিনোদন জাতের কবুতর মানুষ এর সৌন্দর্যের জন্য পালন করে
থাকে। এ জাতের কবুতর গুলোর মধ্যে রয়েছে, গিরিবাজ , রেসার বা হোমা , লাক্ষা বা
ময়ূরপঙ্খী , সিরাজী , লাহোরী , লোটন , হোয়াইট কিং , ফ্যানটেইল , সিলভার কিং,
ডাউকা , কাওরা , গোলা , হাম কাচ্ছা , জালালী , মুক্ষি , শর্টফেস , লংফেস , চিলা ,
পোর্টার এবং হেলমেট ইত্যাদি। এর মধ্যে গিরিবাজ কবুতরের একটি আকর্ষণীয় গুণ
রয়েছে। আর তা হলো এই কবুতর শূন্যে উড়ন্ত অবস্থা ডিগবাজি দিতে পারে। এজন্য এই
কবুতর সকল কবুতর প্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে।
শীতে কবুতরের পরিচর্যা ও পদক্ষেপ
সকল বয়সের মানুষই কবুতর পালন করে থাকে। কবুতর পালন অনেকটা সহজ হলেও শীতকালে
কবুতর পালনে অনেক বেশি ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। কারণ শীতকালে নরমালি ঠান্ডার
জন্য কবুতরের খাওয়া-দাওয়া, পানি এবং চলাফেরার পরিমাণ অনেক কমে যায়।
তার ওপর শীতের সময় কবুতরের অনেক ধরনের রোগ দেখা দেয়। যা কবুতর পালনে ব্যাঘাত
ঘটায়। তাই শীতকালে কবুতরের প্রতি অনেক বেশি পরিচর্যা করতে হয়। নিচে শীতে
কবুতরের পরিচর্যা অথবা কবুতরকে সুস্থ রাখতে করণীয় করণীয় কি কি তা বিস্তারিত
আলোচনা করা হলো।
- শীতে কবুতরকে সুস্থ রাখার জন্য সর্বপ্রথম আমাদের যেটা করতে হবে তা হলো রাতে কবুতরের ঘরের তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজন হলে কবুতরের ঘরে হিটার অথবা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এমন বাল্ব দিতে হবে। এবং ঠান্ডা বাতাস যেন না প্রবেশ করতে পারে সেজন্য কাপড় বা বাতাস ঢুকতে পারবে না এ ধরনের কোন কিছু দিয়ে কবুতরের ঘর ঘিরে দিতে হবে।
- শীতে কবুতরের খাবারে তৈল বীজ জাতীয় খাবার সংযোগ করতে হবে। যেমন সরিষা , সূর্যমুখী বিচি , বাজরা , কুসুম বীজ এবং তিসি। এ খাবারগুলো কবুতরের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- নিয়মিত কবুতরের খাবারের পাত্র এবং পানির পাত্র পরিষ্কার করতে হবে এবং ধুলাবালি মুক্ত ও পরিষ্কার খাবার খেতে দিতে হবে।
- মাসে তিন দিন করে যথাক্রমে ক্যালসিয়াম , মাল্টিভিটামিন এবং জিংক পানির সাথে মিশিয়ে খেতে দিতে হবে। এক লিটার পানিতে এক মিলি থেকে দুই মিলি পরিমাণ এই ওষুধগুলি দিয়ে কবুতরকে দিতে হবে। প্রতি ১০ টি কবুতরের জন্য এক লিটার পানি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে এই ওষুধ মিশ্রিত পানি যেন পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টার বেশি কবুতরের ঘরে না রাখা হয়। এক কথায় এই ওষুধ মিশ্রিত পানি 5 থেকে 6 ঘন্টা পরে ফেলে দিয়ে নরমাল পানি দিতে হবে।
- শীতের সময় কবুতরকে মাসে দুই থেকে তিন দিন গোসল করার পানি দিতে হবে। এবং পানিটি হতে হবে হালকা কুসুম কুসুম গরম এবং পরিষ্কার।
- কবুতরের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- কবুতরকে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় পর পর কৃমি মুক্ত করতে হবে।
- কবুতরের ঘরে বাহিরের কোন মানুষ প্রবেশ করার পূর্বে অবশ্যই তার পুরো শরীর জীবাণুনাশক দ্বারা প্রে করে নিতে হবে। এবং আপনিও যদি বাহিরে যান তবে আপনাকেও জীবন নাশক ওষুধ দ্বারা করে তবেই কবুতরের ঘরে প্রবেশ করতে হবে।
- শীতে কবুতরকে হাওয়ার পানি হালকা কুসুম কুসুম গরম করে দিতে হবে।
- কোন কবুতর যদি অসুস্থ হয় তবে সে কবুতরকে সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য কবুতর থেকে আলাদা করে চিকিৎসা করতে হবে।
- শীতের নতুন কোন কবুতর খামারে বা কবুতরের ঘরে প্রবেশ করানো যাবে না।
- হাট বা দোকান থেকে কোন কবুতর নিয়ে আসলে সেই কবুতরকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।
- সপ্তাহে একদিন দুইদিন চিনি , লবণ এবং লেবু মিশ্রিত পানি খেতে দিতে হবে।
- সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন নিয়মিতভাবে কবুতরের গ্রিট খেতে দিতে হবে।
- এছাড়া সপ্তাহে একদিন নিম পাতা , সজনে পাতা, তুলসী পাতা, পাথরকুচি পাতা , থানকুনি পাতা , কাঁচা হলুদ , এবং পুদিনা পাতা একসাথে মিশ্রণ করে পানির সাথে খেতে দিতে হবে।এছাড়া শীতকালে আপনাকে কবুতরের প্রতি অধিক যত্নশীল হতে হবে এবং সব সময় খেয়াল রাখতে হবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা
করেছি,কবুতর পালন পদ্ধতি, শীতে কবুতরের পরিচর্যা এবং পদক্ষেপ, কবুতরের কোন সমস্যা
দেখা দিলে তা নিরাময় অথবা চিকিৎসা কি দিতে হয় এবং কবুতরের জাত সম্পর্কিত
বিস্তারিত তথ্য।
আর তাই এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা কোন উপকারে আসে তবে অবশ্যই
আপনারা আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন এবং আমাদের এই
ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন।
ধন্যবাদ
Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url