খুশকি দূর করার শ্যাম্পু এবং খুশকি দূর করার তেল
প্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো অনেকেই খুশকি দূর করার শ্যাম্পু এবং খুশকি দূর করার তেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন কিন্তু পাচ্ছেন না । আর তাই আপনাদের জন্য আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো, খুশকি দূর করার শ্যাম্পু এবং খুশকি দূর করার তেল সহ খুশকি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য। খুশকি প্রত্যেকটি মানুষেরই দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারন সমস্যা।প্রধানত শীতকালে সব বয়সী মানুষেরই এই খুশকির উপদ্রব বেড়ে যায়।
কিন্তু বর্তমানে এটি আবহাওয়া পরিবর্তন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দূষণ,জীবনযাত্রায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এর ফলে প্রায় সারা বছরই খুশকি সমস্যা দেখা যায়।খুশকি একটি সাধারন সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি ক্ষতিকর না। তবে এর সঠিক গুরুত্ব না দিলে, এটি আরো বেশি পরিমাণে হতে পারে। এরফলে অতিরিক্ত চুল পড়া সমস্যায় ভুগতে হতে পারে। আর তাই খুশকি দূর করার শ্যাম্পু এবং খুশকি দূর করার তেল সহ খুশকি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে এ পুরো আর্টিকেলটি খুব ভালোভাবে পড়ে নিন।
ভূমিকা
যেহেতু খুশকি কমবেশি সব ধরনের বয়সের মানুষেরই হয়ে থাকে। তাই এটি একটি সাধারণ সমস্যা। আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব,খুশকি কেন হয়,খুশকি হওয়ার লক্ষণ, খুশকি দূর করার কার্যকরী উপায,খুশকি দূর করার শ্যাম্পু এবং খুশকি দূর করার তেল সহ পুষ্টি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
আর তাই আমরা আশা করছি এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং খুশকি দূর করার শ্যাম্পু এবং খুশকি দূর করার তেল সহ খুশকি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য গুলো জেনে নিবেন।
খুশকি কেন হয়
চিকিৎসকদের মতে খুশকি হওয়ার প্রধান কারণ হলো ফাংগাল ইনফেকশন। মূলত ম্যালাসেজিয়া নামক একটি ফাঙ্গাসের কারণে খুশকি হয়ে থাকে। এগুলা চামড়ার সাথে অথবা চুলের সাথে থাকে। এছাড়াও অনেকের জেনেটিক কারণেও খুশকি হয়ে থাকে।এর ফলে মাথায় চুলকানি ছাড়াও নিয়মিত চুল পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও মাথায় খুশকি হওয়ার আরো বেশ কিছু কারণ নিচে হলো উল্লেখ করা হলো।
- ধুলাময়লা চুলের ভেতরে জমে থাকলে তা খুশকিতে পরিণত হয়।
- সঠিক পদ্ধতিতে শ্যাম্পু না করলে খুশকি হয়।
- নিয়মিত গোসল না করলে খুশকি হয়।
- খুশকিযুক্ত অন্য একজনের চিরুনি ব্যবহার করলে খুশকি হতে পারে।
- মাথায় ঘন ঘন তেল দিলে মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- পানি কম খাওয়ার অভ্যাস থাকলে খুশকি হতে পারে।
- মানসিক দুশ্চিন্তা খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণ।
- মাথার চুল বেশি শুষ্ক হলে হুসকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
- যা চুল বেশিক্ষণ বেঁধে রাখলে খুশকি তা থেকে পরবর্তীতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সোরিয়াসিস, ফাংগাল ইনফেকশন,সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, একজিম এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশনের কারণে খুশকি হতে পারে।
খুশকি হওয়ার লক্ষণ
কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য খুশকি লক্ষণ গুলো সনাক্ত করা সহজ। খুশকির লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে মাথার ,চুল ও কাধে ত্বকের সাদা অংশ বা ফ্লেক্স দেখা দেয়। এছাড়া মাথার চুলের নিচে চুলকানি হতে পারে। খুশকি হলে ক্রেডেল ক্যাপসহ আঁশযুক্ত খসখসে ত্বক হতে পারে।
খুশকি দূর করার কার্যকরী উপায়
খুশকি দূর করার জন্য কার্যকরী কিছু ঘরোয়া বা ভেষজ উপায় আছে যা নিচে ভালোভাবে আলোচনা করা হলো।
- পেঁয়াজের রস খুশকি দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পেঁয়াজের রস খুশকি তৈরি কারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। মেথি বীজ রাতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ঘন করে পেস্ট করে নিয়ে পেঁয়াজের রসের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে দিতে হবে। এটি লাগানোর ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে দুই থেকে তিন দিন করলে খুশকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
- লেবু দ্বারা সম্পূর্ণভাবে খুশকি দূর করা সম্ভব। এটি মাঝারি আকৃতির লেবুকে দুই ভাগে ভাগ করে নিয়ে, এক ভাগ লেবুর রস চুলের গোড়ায় সুন্দরভাবে মিশে নিতে হবে। লেবুররস মিশানো অবস্থায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এবার তিন থেকে চার মগ পরিমাণ পানিতে একটি লেবুর রস সম্পূর্ণ মিশিয়ে সে পানি দিয়ে মাথা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে ১০ থেকে ১৫ দিন নিয়মিত করলে খুশকি সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে যায়।
- আমরা উপরে বলেছি লেবু কিভাবে খুশকি থেকে মুক্ত রাখে। তবে এই লেবুর রসের সাথে যদি এক কাপ টক দই সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে 10 থেকে 15 মিনিট চুলে দিয়ে দেখার পর ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নেওয়া যায় তাহলে খুশকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
- এলোভেরার জেলি অংশ চুলে ভালোমতো লাগিয়ে মেসেজ করে নিতে হবে। এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মেসেজ করার পরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন এভাবে করলে খুশকি অনেক অংশে কমে যাই।
- ৪-৫ টি নিম পাতা নিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে গুঁড়ো করে চার চা চামচ অলিভ অয়েল এর মিশিয়ে সুন্দর করে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে প্রতিদিন 40 থেকে 45 মিনিট চুলে ভালো মতো লাগিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে আজ থেকে সাত দিন নিয়মিত করলে খুশকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- হাফ কাপ পরিমাণ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার একটি কলার সাথে ভালো করে পেস্ট করে নিয়ে তা ১৫ থেকে ২০ মিনিট চুলে লাগিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেললে খুশকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এভাবে পাঁচ থেকে সাত দিন নিয়মিত করলে খুশকি ভালো হয়ে যায়।
- এছাড়াও সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন পরিমাণ মতো অলিভ অয়েল চুলে ভালো মতো মিশিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করে নিলে খুশকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
- ১ থেকে ২ চামচ পরিমাণ মেথি রাতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ভালো করে পেস্ট করে নিয়ে ডিমের সাদা অংশের সাথে মিশিয়ে নিয়ে চুলে ভালোমতো লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিলে খুশকি দূর করা যায়।
- এক চা চামচ পরিমাণ বেকিং সোডা চুল ভিজিয়ে নিয়ে চুলে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিয়ে মেসেজ করে দুই মিনিট পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিলে খুশকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- নিয়মিতভাবে সপ্তাহে ২-৩ চুলে ভালো করে নারিকেল তেল ব্যবহার করলে খুশকি রক্ষা পাওয়া যায় বা খুশকি অনেকাংশই কমে যায়।
- চা পাতার তেল প্রতিদিন গোসল করার আগে পরিমাণ মতো নিয়ে ভালোভাবে চুলে দিয়ে মেসেজ করে নিয়ে শেপ দিয়ে গোসল করলে খুশকি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
- এছাড়া নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখা, চুল আঁচড়ানো, সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার শ্যাম্পু করা, কেমিক্যাল মুক্ত পণ্য ব্যবহার করা এবং রোদে বেশিখন ধরে চুল খুলে না রাখা খুশকি থেকে রক্ষা পাওয়ার মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
খুশকি দূর করার শ্যাম্পু
খুশকি দূর করার কার্যকরী উপায় গুলোর মধ্যে শ্যাম্পু অন্যতম।খুশকি থেকে বাঁচার জন্য কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। চুল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তারপর এই শ্যাম্পু মাথায় দুই থেকে পাঁচ মিনিট দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। এরপর মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সাত দিনে দুই দিন এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। দুই সপ্তাহের মতো এই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে খুশকি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
খুশকি দূর করার তেল
খুশকি দূর করার কার্যকরী উপায় গুলোর মধ্যে তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।প্রাকৃতিকভাবে খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কয়েক ধরনের তেল আছে যা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এমন কিছু তেলের নাম নিচে দেওয়া হল।
- চা গাছের তেল ব্রণ খুশকি চিকিৎসায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খুশকি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- নারিকেল তেল ব্যবহারে খুশকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
- ঘৃতকুমারী খুশকি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- ওমেগা-৩ খুশকি প্রতিরোধে ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- এছাড়া প্রবায়োটিকস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে খুশকি প্রতিরোধ।
খুশকি দূরীকরণে কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
খুশকি দূর করার কার্যকরী উপায় গুলো সঠিকভাবে চুলের যত্ন এবং ত্বকের যত্ন নেয়ার পরেও যখন দেখবেন আপনার খুশকি ভালো হচ্ছে না বা কমছে না তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাই এরকম যখন হবে আপনাদের উচিত শিশু বিশেষজ্ঞ অথবা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা।তবে খুশকির জন্য যদি কারো সামাজিক, মানসিক, ঘুম এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে ব্যাঘাত ঘটে তবে অবশ্যই আরো ভালো মানের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমরা আপনাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি,খুশকি কেন হয়,খুশকি কেন হয়,খুশকি হওয়ার লক্ষণ, খুশকি দূর করার কার্যকরী উপায,খুশকি দূর করার শ্যাম্পু এবং খুশকি দূর করার তেল সহ পুষ্টি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
তাই এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে যদি আপনাদের কোন উপকার হয়ে থাকে অথবা ভালো লেগে থাকে তবে, অবশ্যই আর্টিকেলটি আপনি আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন।
ধন্যবাদ
Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url