জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম এবং বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম বিস্তারিত দেখুন

প্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো অনেকেই জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম এবং বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন কিন্তু সঠিক কোন তথ্য বা উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। আর তাই আমরা আপনাদের জানাবো জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম এবং বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম এবং বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম বিস্তারিত দেখুন

মুসলমান ধর্মাবলীদের জন্য জানাজার নামাজ এবং বিতরের নামাজ গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ। কারন কেউ মারা গেলে তার জন্য জানাজার নামাজ পড়তে হয়। এবং প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার নামাজের শেষে তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়তে হয় যার জন্য বিতর নামাজ ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব, জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম এবং বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব, জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম , জানাজার নামাজ পড়ার দোয়া সমূহ , বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম , ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম , এবং সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ পড়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম

জানানোর জান নামাজ পড়ার পূর্বে মনে মনে জানাজার নামাজের নিয়ত করে নিতে। হবে মনে মনে জানাজার নিয়ত করা ফরজ আর তাই মনে মনে নিয়ত করতে হয়। জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া চার তাকবিরের সহিত এই মাইয়াতের জন্য এই ইমামের পেছনে আদায় করছি, শুধু এইটুকু নিয়ত করলেই হবে। এরপর ইমাম সাহেব আল্লাহু আকবর বলে অর্থাৎ প্রথম তাকবীর বলে নামাজ শুরু করার পরে সর্বপ্রথম ছানা পড়ে নিতে হবে।
এরপর দ্বিতীয় তাকবির বলে দরুদ পাঠ করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই তাকবীরে হাত উঠবে না।ইমাম সাহেব তৃতীয় তাকবীর বলে ওই মৃত ব্যক্তি এবং মুসলমানদের জন্য দোয়া করবে। এবং এই তাকবীরেও হাত উঠবে না।
এরপর ইমাম সাহেব চতুর্থ তাকবীর বলবে এবং তখনও হাত উঠবে না। ইমাম সাহেব চতুর্থ তাকবীর বলার পরে ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরাবে। আর এভাবেই জানাযার নামাজ শেষ হবে।

জানাজার নামাজ পড়ার দোয়া সমূহ

নিচে বিস্তারিতভাবে জানাজার নামাজ পড়ার দোয়া সমূহ আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ দেওয়া হল।

ছানা

سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ-

উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা ঝাদ্দুকা ওয়া ঝাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।

অর্থ : হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার। আপনি সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পবিত্র। আপনার নাম মঙ্গল ও বরকতপূর্ণ, আপনার মহত্ত্ব অতি বিরাট, আপনার প্রশংসা অতি মহত্ত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই।
দুরুদ

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ কর, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান কর, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত।

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

ভিতর শব্দটি আরবি শব্দ থেকে এসেছে এবং এর অর্থ হল বিজোড়। বিতর নামাজ এশার নামাজ এর শেষে পড়তে হয়। এবং রমজান মাসে তারাবিহ এর নামাজ শেষে এই বিতর নামাজ পড়তে হয়। এই ভিতরের নামাজ তিন রাকাত। তবে অনেকে এই বিতরের নামাজ এক রাকাত ও পড়ে থাকেন। নিচে বিস্তারিতভাবে বিতরের নামাজ পড়ার নিয়ম আলোচনা করা হলো।

অন্যান্য ফরজ নামাজের মতই দুই রাকাত নামাজ পড়ে বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়ে তৃতীয় রাকাত পড়ার জন্য উঠে সূরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য যে কোন সূরা মিলিয়ে সূরা শেষ হওয়ার পরে পুনরায় তাকবীর বলে দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমার মত হাত বাধতে হয়।
এরপর দোয়া কুনুত পড়ে পূর্বের মতো রুকু এবং সিজদার পর শেষ তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাছুরা পড়ে ছালাম ফিরানোর মাধ্যমে বিতরের নামাজ সমাপ্ত করতে হয়।

ঈদের নামাজের নিয়ম

যেহেতু ঈদের নামাজ বছরে দুইবার হয় তাই অনেকেই ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ভুলে যায় । আর তাই নিচে বিস্তারিত হবে ঈদের নামাজের নিয়ম আলোচনা করা হলো।
ঈদের নামাজের নিয়ত-

نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি 'আল্লাহু আকবার'।

অর্থ: আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এ ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- 'আল্লাহু আকবার'। তবে মনে রাখতে হবে এখানে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়লে ঈদুল ফিতরের কথা উল্লেখ করতে হবে এবং ঈদুল আযাহার নামাজ পড়লে ঈদুল আযহার কথা উল্লেখ করতে হবে।

নিয়ত হয়ে গেলে ইমামের সঙ্গে প্রথম তাকবীরে আল্লাহু আকবার বলে উভয় হাত বেঁধে নিতে হবে। প্রথম তাকবীরের পর ছানা পড়ে নিতে হবে। ছানাপাড়া হয়ে গেলে অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে এক তাকবীর থেকে আরেক তাকবীর এর মধ্যে তিন তসবির পরিমাণ সময় বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীরের উপরে হাত উঠিয়ে তারপরে আবার হাত ছেড়ে দিতে হবে এবং তৃতীয় তাকবীরে হাত বেঁধে নিতে হবে। এরপর সূরা ফাতেহা এবং সাথে অন্য সূরা মিলানোর পর নিয়মিত নামাজের মত রুকুও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করে নিতে হবে।

দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য যেকোনো সূরা মিলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিতে হবে। এবং মনে রাখতে হবে প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীরে উভয় হাত উঠিয়ে তারপরে আবার ছেড়ে দিতে হবে। এরপর তৃতীয় তাকবীর হাত বেঁধে নিতে হবে। এবং তারপর রুকুর তাকবীর দিয়ে রুকুতে যেতে হবে এবং সেজদা আদায় করে নিয়মিত নামাজের মতই নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।

সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ পড়ার নিয়ম

বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য যে নামাজ পড়া হয় বা নামাজ আদায় করা হয় তাকে বলা হয় সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ । খোলা মাঠে আজান ইকামত ছাড়া উচ্চস্বরে কেরাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। আর এই নামাজ পড়ার নিয়ম হলো প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরিমার পর ৭ বার তাকবীর দিতে হয় এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচবার তাকবির দিতে হয়। তবে মনে রাখতে হবে প্রতিটি তাকবীরের সময় হাত উঠাতে হবে। এভাবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। এরপর দুই হাত উঠিয়ে মিনতি সঙ্গে দোয়া করতে হবে এবং হাদিসে বর্ণিত দোয়া গুলো বেশি বেশি পড়তে হবে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) বৃষ্টির জন্য স্বয়ং একটি দোয়া পাঠ করেছেন। আর তা হলো

‏ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ‏ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ اللَّهُمَّ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلاَغًا إِلَى حِينٍ ‏

উচ্চারণ: ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আর-রাহমানির রাহিম। মালিকি ইয়াউমিদ্দিন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইয়াফয়ালু মা ইউরিদ। আল্লাহুম্মা আনতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল গানিয়্যু ওয়া নাহলুল ফুকারাউ। আনজিল আলাইনাল গাইছা ওয়াজআল মা আনজালতা লানা কুওয়্যাতান ওয়া বালাগান ইলা হিন।’

অর্থ: ‘সব প্রশংসা পৃথিবীর প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তিনি পরম করুণাময়, দয়ালু ও শেষ বিচারের মালিক। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি যা ইচ্ছা করেন। হে আল্লাহ, তুমিই একমাত্র মাবুদ, তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি ধনী, আমরা গরিব। আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করো এবং আমাদের জন্য যা অবতীর্ণ করো, তা আমাদের জন্য শক্তিময় ও কল্যাণ দান করো।’ (আবু দাউদ: ১১৭৩)

শেষ কথা

প্রিয় পাঠ্যবৃন্দ আমরা আপনাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি,জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম , জানাজার নামাজ পড়ার দোয়া সমূহ , বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম , ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম , এবং সালাতুল ইসতিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ পড়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
আর তাই এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কোন উপকারে এসে থাকে অথবা ভাল লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনারা আপনাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url