গ্যাসের ট্যাবলেট কোনটা ভালো এবং স্কয়ারের গ্যাসের ট্যাবলেট গুলো কি কি
প্রিয় পাঠক আপনি কি গ্যাসের ট্যাবলেট কোনটা ভালো এবং স্কয়ারের গ্যাসের ট্যাবলেট
গুলো কি কি জানতে চাচ্ছেন কিন্তু সঠিক কোন তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না ? চিন্তার কোন
কারণ নেই। কারণ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব,গ্যাসের
ট্যাবলেট কোনটা ভালো এবং স্কয়ারের গ্যাসের ট্যাবলেট গুলো কি কি তার বিস্তারিত
তথ্য।
গ্যাসের সমস্যা (যাকে সাধারণত অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক বলা হয়) অনেক মানুষের
একটি সাধারণ সমস্যা। এটি মূলত পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন হলে বা হজমের
গোলমালের কারণে হয়।। তাই আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো,গ্যাসের
ট্যাবলেট কোনটা ভালো এবং স্কয়ারের গ্যাসের ট্যাবলেট গুলো কি কি তার বিস্তারিত
তথ্য।
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আপনাদের এয়ারটেল মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব, গ্যাস কি ,
গ্যাস কেন হয় ,গ্যাসের ট্যাবলেট কোনটা ভালো ,স্কয়ারের গ্যাসের ট্যাবলেট গুলো কি
কি , গ্যাসের ওষুধের দাম কত , গ্যাস থেকে বাঁচার উপায় , গ্যাস থেকে বাঁচার
ঘরোয়া উপায় , গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম এবং গ্যাসের হোমিও ঔষধ সহ গ্যাস
সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
গ্যাস কি
গ্যাস বা পেটে গ্যাস হওয়া মানে হলো পেটের ভেতরে বাতাস বা গ্যাস জমে যাওয়া, যা
পেট ফাঁপা, অস্বস্তি, বা ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত হজমজনিত সমস্যা থেকে
হয়ে থাকে এবং প্রায় সবার জীবনেই মাঝে মাঝে ঘটে। এই সমস্যার প্রধান লক্ষণগুলো
হলো বুকজ্বলা, পেটফাঁপা, ঢেঁকুর ওঠা, অস্বস্তি ইত্যাদি।
গ্যাস কেন হয়
গ্যাস বা পেটে বাতাস জমার প্রধান কারণ হলো হজম প্রক্রিয়ায় অসুবিধা বা অতিরিক্ত
অ্যাসিড উৎপাদন। এটি পেট ও অন্ত্রে জমে পেটফাঁপা, অস্বস্তি, এবং ব্যথার সৃষ্টি
করতে পারে। গ্যাস হওয়ার কারণগুলো প্রধানত খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারা, এবং হজম
প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। নিচে গ্যাস হওয়ার প্রধান কারণ গুলো বিস্তারিতভাবে
দেওয়া হল।
- মসলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার: অতিরিক্ত ঝাল বা চর্বিযুক্ত খাবার হজম করতে সময় নেয়, যা গ্যাসের সৃষ্টি করে।
- ফাইবার বেশি থাকা খাবার: ডাল, বাঁধাকপি, ব্রকলি, শিম, ইত্যাদি বেশি খেলে গ্যাস হতে পারে।
- দ্রুত খাওয়া: খাবার দ্রুত খেলে বাতাস পেটে ঢুকে গ্যাস বাড়ায়।
- কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস: কোমল পানীয় ও সোডা পান করার সময় পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে।
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার কারণে অনেকের দুধ খেলে গ্যাস হয়।
- অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন: পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড হলে তা গ্যাসের কারণ হয়।
- হজমজনিত রোগ: গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS), এবং আলসার রোগে গ্যাস হয়।
- পেটে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি: অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া কিছু খাবার হজমের সময় অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি করে।
- ব্যায়ামের অভাব: শরীরচর্চা না করলে হজম প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলে, যা গ্যাসের কারণ হতে পারে।
- খাওয়ার পর শুয়ে পড়া: খাবার খাওয়ার পরপর শুয়ে পড়লে হজমে অসুবিধা হয়।
- ধূমপান ও চুইংগাম চিবানো: এগুলোর কারণে পেটে বাতাস জমে গ্যাস বাড়ে।
- মানসিক চাপ বা উদ্বেগে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, যা গ্যাসের কারণ হতে পারে।
যদি গ্যাস নিয়মিত বা দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে এটি কোনো অন্তর্নিহিত রোগের লক্ষণ হতে
পারে। সেক্ষেত্রে একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গ্যাসের ট্যাবলেট কোনটা ভালো
গ্যাসের সমস্যার জন্য সঠিক ট্যাবলেট নির্ভর করে সমস্যার প্রকৃতি, কারণ এবং
ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপর। সাধারণত গ্যাস কমানোর জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো তিনটি
প্রধান ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলঃ
অ্যান্টাসিড (Antacids)
অ্যান্টাসিড হলো এমন ওষুধ যা পেটে জমে থাকা অতিরিক্ত অ্যাসিডকে দ্রুত নিরপেক্ষ
করে। এটি সাধারণত বুকজ্বলা, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি এবং বদহজমজনিত অস্বস্তি দূর
করতে ব্যবহৃত হয়।
অ্যান্টাসিডের কাজের ধরন
- অ্যান্টাসিড পেটের অ্যাসিডকে রাসায়নিকভাবে নিরপেক্ষ করে।
- এটি হজমতন্ত্রের গ্লুকোজামাইন লেয়ারকে রক্ষা করে অ্যাসিডের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে।
- দ্রুত কাজ করে, তাই তাত্ক্ষণিক উপশম দেয়।
সাধারণ অ্যান্টাসিড ওষুধ
গ্যাস্টিড (Gastid)
- সক্রিয় উপাদান: ম্যাগালড্রেট এবং সিমেথিকন।
- বুকজ্বলা, পেট ফাঁপা, এবং অ্যাসিডিটির জন্য কার্যকর।
ডাইজিন (Digeine)
- সক্রিয় উপাদান: ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড, অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড।
- পেটে অ্যাসিড কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
মেগালড্রেট প্লাস সিমেথিকন
- গ্যাস এবং পেটফাঁপা কমাতে কার্যকর।
এন্টাসিড প্লাস
- বুকজ্বলা এবং বদহজমের জন্য ব্যবহার করা হয়।
অ্যান্টাসিড ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
- সাধারণত খাবারের পর বা বুকজ্বলা অনুভূত হলে খাওয়া হয়।
- দিনে ২-৩ বার বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
- চিউয়েবল ট্যাবলেট হলে ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত।
অ্যান্টাসিড ব্যবহারের সতর্কতা
- দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা বা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে।
- যাঁদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁরা ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া অ্যান্টাসিড গ্রহণ করবেন না।
অ্যান্টাসিডের বিকল্প
যদি গ্যাস বা বুকজ্বলা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) বা
এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন:
- সেকলো (Omeprazole)
- ইজোম্যাক্স (Esomeprazole)
- রানিটিডিন (Ranitidine)
প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (Proton Pump Inhibitors বা PPIs)
প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI) হলো এমন ধরনের ওষুধ যা পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদনের
হার কমায়। এটি গ্যাস্ট্রিক, বুকজ্বলা, এবং গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স
ডিজিজ (GERD)-এর মতো রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি দীর্ঘস্থায়ী অ্যাসিড সংশ্লিষ্ট
সমস্যাগুলোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর।
PPIs কীভাবে কাজ করে
- পাকস্থলীর প্রাচীরে থাকা প্রোটন পাম্প নামক একটি এনজাইম অ্যাসিড উৎপাদনের জন্য দায়ী।
- PPIs এই প্রোটন পাম্পের কার্যক্ষমতা বাধাগ্রস্ত করে, ফলে অ্যাসিড উৎপাদন অনেক কমে যায়।
সাধারণত ব্যবহৃত PPIs ওষুধ
ওমিপ্রাজল (Omeprazole)
- ব্র্যান্ড নাম: Seclo, Losec।
- GERD, গ্যাস্ট্রিক আলসার, এবং দীর্ঘস্থায়ী বুকজ্বলার জন্য ব্যবহৃত।
এসোমেপ্রাজল (Esomeprazole)
- ব্র্যান্ড নাম: Esoral, Nexium, Esomax।
- আরও কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
রাবিপ্রাজল (Rabeprazole)
- ব্র্যান্ড নাম: Neotack, Pariet।
- সাধারণত GERD এবং পেপটিক আলসারের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ল্যান্সোপ্রাজল (Lansoprazole)
- ব্র্যান্ড নাম: Lanzol, Prevacid।
- আলসার নিরাময়ে কার্যকর।
প্যান্টোপ্রাজল (Pantoprazole)
- ব্র্যান্ড নাম: Pantover, Protonix।
- গ্যাস্ট্রিক ও রিফ্লাক্সের জন্য ব্যবহৃত।
PPIs ব্যবহারের প্রধান কারণ
- GERD (গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ): পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে গেলে বুকজ্বলা হয়।
- পেপটিক আলসার: পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ প্রাচীরে ক্ষত হলে।
- জলফোঁড়া/হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি (H. Pylori): ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া সংক্রমণে।
- নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs)-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোধে।
- যেসব রোগে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন হয়।
PPIs ব্যবহারের নিয়ম
- সাধারণত সকালে খাবারের অন্তত ৩০ মিনিট আগে খাওয়া হয়।
- দৈনিক ১ বার বা ২ বার সেবন (ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী)।
- নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কোর্স সম্পন্ন করা গুরুত্বপূর্ণ।
PPIs ব্যবহারে সতর্কতা
- দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন:
- হাড় দুর্বল হওয়া বা অস্টিওপোরোসিস।
- ভিটামিন বি১২ ঘাটতি।
- কিডনির কার্যকারিতায় সমস্যা।
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- যদি ওষুধ বন্ধ করতে হয়, তাহলে ধীরে ধীরে বন্ধ করুন (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।
PPIs ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি দীর্ঘস্থায়ী
ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার (H2 Receptor Blockers)
এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার হলো একটি ধরনের ওষুধ যা পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদন কমাতে
সাহায্য করে। এটি পাকস্থলীর এইচ২ রিসেপ্টরে (Histamine H2 receptor) কাজ করে
অ্যাসিড উৎপাদনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এই ওষুধ সাধারণত গ্যাস্ট্রিক, বুকজ্বলা,
এবং আলসার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার কীভাবে কাজ করে
- পাকস্থলীর প্রাচীরে থাকা এইচ২ রিসেপ্টর হরমোন হিস্টামিনের মাধ্যমে অ্যাসিড উৎপন্ন করতে সক্রিয় হয়।
- এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার এই রিসেপ্টরকে ব্লক করে হিস্টামিনের প্রভাব কমায়, ফলে অ্যাসিডের উৎপাদন কমে যায়।
সাধারণত ব্যবহৃত এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার
রানিটিডিন (Ranitidine)
- ব্র্যান্ড নাম: Histac, Ranitac, Zantac।
- বুকজ্বলা, গ্যাস্ট্রিক আলসার, এবং GERD-এর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- বর্তমানে অনেক দেশে রানিটিডিন নিষিদ্ধ বা সীমিত ব্যবহারযোগ্য (বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে)।
ফ্যামোটিডিন (Famotidine)
- ব্র্যান্ড নাম: Famocid, Pepcid, Histodil।
- গ্যাস্ট্রিক ও বুকজ্বলা কমানোর জন্য নিরাপদ ও কার্যকর।
- রানিটিডিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- সিমেটিডিন (Cimetidine)প্রথম প্রজন্মের এইচ২ ব্লকার।
- ব্র্যান্ড নাম: Tagamet।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে বর্তমানে কম ব্যবহৃত।
নিজাটিডিন (Nizatidine)
- ব্র্যান্ড নাম: Axid।
- বুকজ্বলা ও গ্যাস্ট্রিকের জন্য ব্যবহৃত।
এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার ব্যবহারের প্রধান কারণ
- GERD (গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ): পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে গেলে বুকজ্বলা হয়।
- গ্যাস্ট্রিক আলসার: পাকস্থলীর ভেতরের প্রাচীরে ক্ষত হলে।
- অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির কারণে বদহজম।
- জলফোঁড়া বা খাদ্যনালীর ক্ষত।
- দীর্ঘমেয়াদে NSAIDs ওষুধ ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোধে।
ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
- সাধারণত খাবারের আগে বা রাতে শোবার আগে সেবন করা হয়।
- দৈনিক ১-২ বার সেবন, ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী।
- কোর্স সম্পূর্ণ করা জরুরি।
এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার ব্যবহারের সুবিধা
- দ্রুত কাজ: বুকজ্বলা এবং অ্যাসিডিটি থেকে দ্রুত উপশম দেয়।
- সহজলভ্য: ওষুধগুলি সাধারণত সহজেই পাওয়া যায়।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম: অন্যান্য ওষুধের তুলনায় তুলনামূলক নিরাপদ।
সতর্কতা
- দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে হজমে সমস্যা বা খাদ্যনালীতে সংক্রমণ হতে পারে।
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- লিভার বা কিডনির সমস্যা থাকলে ওষুধটি সেবনের আগে ডাক্তারের নির্দেশ গ্রহণ করা জরুরি।
কোন ট্যাবলেট ভালো?
- তাত্ক্ষণিক উপশমের জন্য: অ্যান্টাসিড যেমন গ্যাস্টিড বা ডাইজিন।
- দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস বা GERD-এর জন্য: প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (যেমন সেকলো বা ইজোম্যাক্স)।
- মৃদু বা মাঝারি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য: এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার (যেমন রানিটিডিন বা ফ্যামোটিডিন)।
সতর্কতা
- নিজের থেকে ওষুধ না খেয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস বা বুকজ্বলার ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা দরকার হতে পারে।
- আপনার নির্দিষ্ট সমস্যা অনুযায়ী একটি ওষুধ বেছে নিতে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
স্কয়ারের গ্যাসের ট্যাবলেট গুলো কি কি
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটি সংক্রান্ত সমস্যার
জন্য বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদন করে। নিচে তাদের কিছু উল্লেখযোগ্য ওষুধের তালিকা প্রদান
করা হলো:
সেকলো (Seclo)
- সক্রিয় উপাদান: ওমিপ্রাজল।
- ব্যবহার: গ্যাস্ট্রিক আলসার, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), এবং অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদনজনিত সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
ল্যানসো ডি (Lanso D)
- সক্রিয় উপাদান: ডেক্সল্যানসোপ্রাজল।
- ব্যবহার: বুক জ্বালাপোড়া, গ্যাস্ট্রিক আলসার, এবং গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজের (GERD) চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
উপরোক্ত ওষুধগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ
করা উচিত। কারণ সঠিক মাত্রা ও সেবনবিধি রোগীর অবস্থা ও রোগের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন
হতে পারে।
গ্যাসের ওষুধের দাম কত
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির ওষুধের দাম বিভিন্ন ব্র্যান্ড, সক্রিয় উপাদান এবং
ওষুধের ফর্মুলেশনের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। নিচে কিছু সাধারণ গ্যাস্ট্রিক
ওষুধের আনুমানিক দাম উল্লেখ করা হলো:
সারজেল ২০ মি.গ্রা. ক্যাপসুল (Sergel 20 mg Capsule)
- সক্রিয় উপাদান: ইসোমিপ্রাজল।
- ব্যবহার: গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), গ্যাস্ট্রিক আলসার ইত্যাদির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- দাম: প্রতি প্যাকেটের দাম প্রায় ৮০ টাকা (প্রতি প্যাকেটে ১০টি ক্যাপসুল)।
কুইকফস গ্যাস ট্যাবলেট (QuickPhos Gas Tablets)
- সক্রিয় উপাদান: অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ৫৭%।
- ব্যবহার: গ্যাস্ট্রিক সমস্যার উপশমে ব্যবহৃত হয়।
- দাম: ২০ পিস ট্যাবলেটের একটি টিউবের দাম প্রায় ১২০ টাকা।
উল্লেখ্য, ওষুধের দাম সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে এবং বিভিন্ন ফার্মেসিতে
দামের তারতম্য থাকতে পারে। সঠিক ও সর্বশেষ দাম জানতে স্থানীয় ফার্মেসিতে যোগাযোগ
করা উত্তম। এছাড়াও, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
গ্যাস থেকে বাঁচার উপায়
গ্যাস বা অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পেতে এবং ভবিষ্যতে এটি এড়াতে কিছু কার্যকরী
পরামর্শ অনুসরণ করা যেতে পারে। এই পরামর্শগুলো খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, এবং
ওষুধের ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
নিচে বিস্তারিতভাবে গ্যাস থেকে বাঁচার উপায় দেওয়া হলো।
- অতিরিক্ত মশলাদার ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: এগুলো অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায়।
- ক্যাফেইন ও কার্বনেটেড পানীয় কমিয়ে দিন: চা, কফি, সফট ড্রিংকস গ্যাস তৈরি করতে পারে।
- ফাইবারযুক্ত খাবার খান: সবজি, ফল, ও গোটা শস্য হজমশক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস কমায়।
- প্রোটিন ও সহজপাচ্য খাবার বেছে নিন: ডাল, সেদ্ধ খাবার বা গ্রিলড প্রোটিন।
- ছোট পরিমাণে ঘন ঘন খাবার খান: একবারে বেশি খাবার খেলে পাকস্থলীতে চাপ পড়ে এবং গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
- প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- খাবারের সময় অল্প পরিমাণে পানি পান করুন, বেশি পানি খাবারের পর পান করলে গ্যাস কম হয়।
- খাবারের পরে দ্রুত শুয়ে পড়বেন না।
- খাবারের অন্তত ২ ঘণ্টা পর শুতে যান।
- ধীরে ধীরে খাবার চিবিয়ে খান।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত ওজন অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও গ্যাস বাড়াতে পারে।
- ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন: এগুলো অ্যাসিডিটি বাড়ায়।
- ব্যায়াম করুন: হালকা যোগব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
- স্ট্রেস কমান: মানসিক চাপ অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে।
- আদা: হজমশক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস কমায়।
- পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতার রস বা চা হজমে সহায়ক।
- জিরা: জিরার পানি বা চা গ্যাস নিরসনে কার্যকর।
- ইসবগুল: হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
- অ্যান্টাসিড: তাত্ক্ষণিক বুকজ্বলা ও গ্যাস থেকে মুক্তি দেয়।
- প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (PPI): দীর্ঘস্থায়ী অ্যাসিডিটির জন্য।
- এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার: দ্রুত অ্যাসিড কমাতে।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করুন।
- গ্যাসের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে।
- ওষুধে কাজ না হলে।
- পেটে ব্যথা, বমি, বা অস্বাভাবিক ওজন কমে গেলে।
গ্যাস থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায়
গ্যাসের সমস্যা থেকে বাঁচতে ঘরোয়া উপায়গুলো বেশ কার্যকর। নিচে বিস্তারিতভাবে
গ্যাস থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায় গুলো দেওয়া হল ।
- আদা ও লেবু: এক চামচ আদার রসের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- পুদিনা পাতা: পুদিনার চা বা পাতার রস হজমে সহায়তা করে।
- জিরা পানি: জিরা গুঁড়ো গরম পানির সঙ্গে খেলে অ্যাসিডিটি কমে।
- গরম পানি: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে গরম পানি পান করুন।
- এক কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে চা তৈরি করুন। দারুচিনি হজমশক্তি উন্নত করে এবং গ্যাস প্রতিরোধে কার্যকর।
- তুলসী পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পান করুন। এটি পেটের গ্যাস ও বুকজ্বলা কমায়।
- এক চা চামচ মৌরি চিবিয়ে খান। মৌরি সেদ্ধ করে তার চা পান করুন। মৌরি গ্যাস কমিয়ে পাকস্থলীর স্বস্তি দেয়।
- এক গ্লাস গরম পানিতে ১-২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি হজমে সহায়তা করে এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে।
- এক গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ ইসবগুল মিশিয়ে পান করুন। এটি হজমশক্তি উন্নত করে এবং গ্যাস থেকে মুক্তি দেয়।
- এক গ্লাস গরম দুধে সামান্য হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। হলুদের প্রাকৃতিক গুণাবলী হজমশক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস কমায়।
- প্রতিদিন ৩-৪ বার অল্প পরিমাণে খাবার খান।
- খাওয়ার পরপর শুয়ে পড়বেন না।
- বেশি মসলাযুক্ত বা ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন।
- প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন।
- ব্যায়াম করুন এবং মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।
- খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান।
- তেল, মশলা, এবং ক্যাফেইন কমিয়ে দিন।
- নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করুন।
গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
গ্যাসের সমস্যা নিরাময়ের জন্য ওষুধ সঠিকভাবে খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওষুধের ধরন ও ডোজ ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত। তবে সাধারণত গ্যাসের জন্য
ব্যবহৃত ওষুধের খাওয়ার নিয়ম নিচে দেওয়া হলো:
অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট বা সিরাপ
- যখন খাবেন: খাওয়ার আগে বা পরে, সাধারণত দিনে ২-৩ বার।
- কীভাবে খাবেন: খাবারের ১ ঘণ্টা পরে বা ঘুমানোর আগে।
- উদাহরণ: জেলুসিল, ডাইজিন।
প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার (PPI)
- যখন খাবেন: সকালে খালি পেটে, খাওয়ার আগে ৩০ মিনিট।
- কীভাবে খাবেন: প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়া ভালো।
- উদাহরণ: ওমিপ্রাজল, এসোমিপ্রাজল।
এইচ-২ ব্লকার (H2 Blocker)
- যখন খাবেন: খাওয়ার আগে বা রাতে ঘুমানোর আগে।
- কীভাবে খাবেন: সাধারণত দিনে ১ বা ২ বার।
- উদাহরণ: রেনিটিডিন, ফামোটিডিন।
গ্যাস দূর করার জন্য অন্যান্য ওষুধ (সিমেথিকন)
- যখন খাবেন: খাবারের পর বা প্রয়োজনে।
- কীভাবে খাবেন: চিউ করার ট্যাবলেট হলে চিবিয়ে খেতে হবে।
- উদাহরণ: গ্যাসেক্স।
কিছু সাধারণ পরামর্শ
- ওষুধ খাওয়ার আগে লিফলেট পড়ুন বা ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলুন।
- প্রয়োজন ছাড়া বেশি ওষুধ খাবেন না।
- সমস্যার তীব্রতা বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
- গ্যাসের সমস্যা কমাতে ঝাল, ভাজা-পোড়া এবং অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
গ্যাসের হোমিও ঔষধ
গ্যাসের সমস্যার জন্য হোমিওপ্যাথি একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি ব্যক্তির
শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। নিচে কয়েকটি সাধারণ
হোমিওপ্যাথিক ওষুধ এর নাম বিস্তারিতভাবে দেওয়া হল।
- Carbo Vegetabilis (কার্বো ভেজিটাবিলিস)
- Nux Vomica (নাক্স ভমিকা)
- Lycopodium (লাইকোপোডিয়াম)
- China Officinalis (চায়না অফিসিনালিস)
- Natrum Phosphoricum (ন্যাট্রাম ফসফরিকাম)
পরামর্শ
- হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ডোজ এবং ব্যবহার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হওয়া উচিত।
- ওষুধ খাওয়ার আগে এবং পরে অন্তত ১৫-২০ মিনিট কিছু খাবেন না।
- গ্যাসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
আপনার সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা জটিল মনে হয়, তবে একজন হোমিওপ্যাথিক
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আমরা আপনাদের এই আর্টিকেলটি মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি যে, গ্যাস
কি , গ্যাস কেন হয় ,গ্যাসের ট্যাবলেট কোনটা ভালো ,স্কয়ারের গ্যাসের ট্যাবলেট
গুলো কি কি , গ্যাসের ওষুধের দাম কত , গ্যাস থেকে বাঁচার উপায় , গ্যাস থেকে
বাঁচার ঘরোয়া উপায় , গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম এবং গ্যাসের হোমিও ঔষধ সহ গ্যাস
সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
তাই এই আর্টিকেলটি মাধ্যমে আপনাদের যদি কোন উপকার হয়ে থাকে বা আপনাদের ভালো লেগে
থাকে তবে, আমরা আশা করব আপনারা আপনার বন্ধু-বান্ধবের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার
করবেন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন।
ধন্যবাদ
Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url