এলার্জি চুলকানি দূর করার ঔষধ এবং এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয়

প্রিয় পাঠক আপনার হয়তো অনেকেই জানার চেষ্টা করছেন বা জানতে চাচ্ছেন এলার্জি চুলকানি দূর করার ঔষধ এবং এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় তার বিস্তারিত তথ্য। কিন্তু কোথাও কোন সঠিক তথ্য বা উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। আর তাই আমরা আপনাদের এই আরটিকালের মাধ্যমে জানাবো ,এলার্জি চুলকানি দূর করার ঔষধ এবং এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় সহ এলার্জি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
এলার্জি চুলকানি দূর করার ঔষধ এবং এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয়

এলার্জি হল এমন এক অবস্থা যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সাধারণত ক্ষতিকারক নয় এমন পদার্থের (যেমন ধুলা, পোলেন, খাবার, ওষুধ ইত্যাদি) প্রতি অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া দেখায়। এলার্জি অর্থ অতি প্রতিক্রিয়া। আমাদের দেহের জীবাণু প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক ধরনের ত্রুটি হচ্ছে এলার্জি। আর তাই আজ আমরা আপনাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানাবো ,এলার্জি চুলকানি দূর করার ঔষধ এবং এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় সহ এলার্জি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আপনাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করব , এলার্জি কি , এলার্জি কেন হয় , এলার্জির লক্ষণ , এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় , এলার্জি হলে করণীয় , এলার্জি চুলকানি দূর করার ঔষধ , এলার্জি কত ধরনের হয় , এলার্জি থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায় এবং কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে সহ এলার্জি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।

এলার্জি কি

এলার্জি হল শরীরের ইমিউন সিস্টেমের একটি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যা সাধারণত ক্ষতিকারক নয় এমন পদার্থের (যাকে এলার্জেন বলে) প্রতি অতিসংবেদনশীলতা প্রকাশ করে। এটি একধরনের ইমিউন প্রতিক্রিয়া যেখানে শরীরের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিরীহ পদার্থকে হুমকি মনে করে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করে।
যখন কোনো এলার্জেন (যেমন ধুলা, পোলেন, খাবার বা ওষুধ) শরীরে প্রবেশ করে, তখন ইমিউন সিস্টেম এটি ক্ষতিকর বলে ভুল করে। ফলস্বরূপ, শরীর হিস্টামিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক নিঃসরণ করে, যা বিভিন্ন এলার্জির লক্ষণ তৈরি করে।

এলার্জি কেন হয়

এলার্জি মূলত শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়। সাধারণত, ইমিউন সিস্টেম আমাদের শরীরকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, বা অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এলার্জির ক্ষেত্রে, এটি নিরীহ এবং ক্ষতিকারক নয় এমন কিছু পদার্থকে (যেমন ধুলা, খাবার, বা পোলেন) বিপজ্জনক মনে করে এবং অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এলার্জি কেন হয় তার প্রধান কারণগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলঃ

জিনগত বা বংশগত কারণ
  • পরিবারের মধ্যে কারো এলার্জি থাকলে, আপনারও এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • এটি সাধারণত অ্যাটোপি নামে পরিচিত, যেখানে শরীর সহজেই এলার্জেনের প্রতি সংবেদনশীল হয়।

ইমিউন সিস্টেমের অতিসংবেদনশীলতা
  • ইমিউন সিস্টেম ভুল করে নির্দোষ পদার্থকে (যেমন পোলেন বা খাদ্য প্রোটিন) হুমকি মনে করে।
  • শরীর প্রতিক্রিয়া হিসেবে হিস্টামিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক নিঃসরণ করে, যা এলার্জির লক্ষণ সৃষ্টি করে।

পরিবেশগত কারণ
  • ধুলাবালি, ধোঁয়া, দূষণ, এবং পোলেনের মতো উপাদানের প্রতি দীর্ঘমেয়াদি এক্সপোজার।
  • আবহাওয়ার পরিবর্তনও এলার্জির প্রকোপ বাড়ায়।

খাদ্য এবং জীবনযাত্রা
  • উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া বা সুষম ডায়েটের অভাব।
  • বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

শিশুকালে কম সংস্পর্শে থাকা
  • হাইজিন হাইপোথিসিস: ছোটবেলা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ জীবাণুর সংস্পর্শে না এলে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায় এবং এলার্জির ঝুঁকি বাড়ে।

হরমোন এবং মানসিক চাপ
  • কিছু সময়ে শরীরের হরমোনের পরিবর্তন এলার্জির প্রবণতা বাড়াতে পারে।
  • দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপও ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে।

কিছু বিশেষ উপাদানের সংস্পর্শে থাকা
  • ধোঁয়া, কেমিক্যাল, কৃত্রিম সুগন্ধি বা ডিটারজেন্ট।

এলার্জির লক্ষণ

এলার্জি শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) যখন কোনো নির্দিষ্ট পদার্থকে (এলার্জেন) ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায় তখন এটি ঘটে। এলার্জির লক্ষণ এলার্জেনের ধরণ এবং ব্যক্তির শরীরের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত এলার্জি দেখা দিলে যে লক্ষণগুলো খুব বেশি পরিমাণে দেখা দেয় তা নিচে বিস্তারিত হবে আলোচনা করা হলোঃ

ত্বকের উপর লক্ষণ
  • লালচে ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ
  • চুলকানি
  • ত্বক ফুলে যাওয়া বা চাকা ওঠা (হাইভস)
  • শুষ্ক বা ফাটলযুক্ত ত্বক (বিশেষ করে একজিমার ক্ষেত্রে)
নাক ও শ্বাসতন্ত্রের লক্ষণ
  • হাঁচি
  • নাক দিয়ে পানি পড়া (রাইনোরিয়া)
  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • গলা খুসখুস করা বা ব্যথা
  • শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির সমস্যা
চোখের লক্ষণ
  • লালচে চোখ
  • চোখ চুলকানো
  • পানি পড়া
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল লক্ষণ
  • পেট ব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • বমি বমি ভাব বা বমি
গুরুতর এলার্জির লক্ষণ (অ্যানাফাইল্যাক্সিস)
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
  • গলা বা জিভ ফুলে যাওয়া
  • রক্তচাপ খুব কমে যাওয়া
  • ত্বক ফ্যাকাশে বা নীলচে হয়ে যাওয়া
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
সাধারণ এলার্জেন
  • ধুলা, মাইটস
  • পোলেন (গাছের পরাগ)
  • পশুর লোম বা ত্বক
  • খাবার (যেমন বাদাম, দুধ, ডিম, সামুদ্রিক খাবার)
  • ওষুধ (যেমন পেনিসিলিন)
  • পোকামাকড়ের দংশন বা কামড়
যদি কারও এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয়, বিশেষ করে গুরুতর লক্ষণ, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয়

এলার্জি হলে শরীরে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং এলার্জির প্রকার ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। নিচে সাধারণ এবং গুরুতর সমস্যাগুলো দেওয়া হলো:

হালকা থেকে মাঝারি সমস্যাগুলো
এগুলো সাধারণত কম গুরুতর এবং সাময়িক হয়।

ত্বকের সমস্যা
  • লালচে র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি
  • চুলকানি
  • ত্বকে চাকা ওঠা (হাইভস)
  • ত্বক শুষ্ক ও ফাটল ধরা (যেমন একজিমা)
নাক ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা
  • নাক দিয়ে পানি পড়া বা বন্ধ হওয়া
  • হাঁচি
  • গলা খুসখুস করা বা ব্যথা
  • চোখ লাল হওয়া, পানি পড়া বা চুলকানি (অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস)
পেটের সমস্যা
  • পেট ব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • বমি বমি ভাব বা বমি
  • গ্যাস ও হজমে সমস্যা
শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা
  • হাঁপানি বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া (যদি এলার্জি শ্বাসনালিতে প্রভাব ফেলে)
গুরুতর সমস্যা (অ্যানাফাইল্যাক্সিস)
এই সমস্যা জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। যেমন
  • শ্বাসকষ্ট: গলা বা বুকে টাইট লাগা বা হাঁপানি তীব্র হওয়া।
  • গলা ও জিহ্বা ফুলে যাওয়া: যা শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া: মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • ত্বক ফ্যাকাশে বা নীলচে হওয়া।
  • হৃদস্পন্দন দ্রুত বা অনিয়মিত হওয়া।
  • বমি ও ডায়রিয়া একইসাথে হওয়া।
দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা
যদি এলার্জি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে এটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন
  • হাঁপানি: শ্বাসনালির প্রদাহ ও সংকোচনের কারণে হয়।
  • সাইনোসাইটিস: নাকের ভেতরের সাইনাসগুলোতে প্রদাহ।
  • ডার্মাটাইটিস: ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ।
এলার্জির ঝুঁকি বাড়ানোর কারণ
  • ধুলা, ধোঁয়া, পরাগরেণু বা রাসায়নিক দ্রব্য।
  • নির্দিষ্ট খাবার (যেমন বাদাম, ডিম, দুধ)।
  • ওষুধ বা পোকামাকড়ের দংশন।
যদি গুরুতর এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয়, তবে এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। হালকা এলার্জির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন বা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।

এলার্জি হলে করণীয়

এলার্জি হলে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। এলার্জির তীব্রতা ও কারণ অনুযায়ী করণীয় ভিন্ন হতে পারে। নিচে এলার্জির চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার ধাপ দেওয়া হলো:

এলার্জির তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাপনা
হালকা এলার্জি
  • অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ: এটি এলার্জির সাধারণ লক্ষণ যেমন চুলকানি, হাঁচি বা ত্বকের র‍্যাশ কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের জন্য ক্রিম: চুলকানি বা লালচেভাবের জন্য হাইড্রোকর্টিসন ক্রিম বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করতে পারেন।
  • ঠান্ডা সেঁক: চুলকানি বা ফোলা ত্বকে ঠান্ডা সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়।
নাক ও শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা
  • নোজাল স্প্রে: নাক বন্ধ হলে লবণ পানির নোজাল স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • বাষ্প নেওয়া: শ্বাস নিতে সমস্যা হলে গরম পানির বাষ্প নিলে উপকার হতে পারে।
চোখের সমস্যা
  • পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে নিন।
  • প্রয়োজনে অ্যালার্জি প্রতিরোধক আই ড্রপ ব্যবহার করুন।
গুরুতর এলার্জি (অ্যানাফাইল্যাক্সিস) হলে করণীয়
  • ইপিনেফ্রিন ইঞ্জেকশন: যদি কারও অ্যানাফাইল্যাক্সিস হয়ে থাকে, সঙ্গে ইপিনেফ্রিন ইঞ্জেকশন থাকলে তা তাৎক্ষণিক প্রয়োগ করুন।
  • জরুরি সাহায্য: দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস নিশ্চিত করতে রোগীকে সোজা করে বসান বা শুইয়ে দিন।
দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনা
এলার্জেন এড়িয়ে চলুন
  • খাবারের এলার্জি: যে খাবার থেকে সমস্যা হয় (যেমন বাদাম, দুধ, ডিম) তা এড়িয়ে চলুন।
  • পরিবেশগত এলার্জি: ধুলা, ধোঁয়া, পোলেন বা পশুর লোম এড়িয়ে চলুন।
  • ওষুধ বা পোকামাকড়ের কামড়: যদি এগুলোতে সমস্যা হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এপিপেন (EpiPen) রাখুন।
ইমিউনোথেরাপি
  • ক্রনিক এলার্জির জন্য চিকিৎসক বিশেষ থেরাপি দিতে পারেন। এটি শরীরকে ধীরে ধীরে এলার্জেনের প্রতি সহনশীল করে তোলে।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
  • ঘর পরিষ্কার রাখুন এবং ধুলা বা মাইটস মুক্ত রাখুন।
  • যেসব স্থান ধোঁয়া, পোলেন বা রাসায়নিক পদার্থযুক্ত, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
  • প্রয়োজনে হিউমিডিফায়ার বা এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ
  • যদি এলার্জি বারবার হয় বা তীব্র হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • অ্যালার্জি শনাক্তকরণের জন্য স্কিন টেস্ট বা ব্লাড টেস্ট করানো যেতে পারে।
  • চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধ বা থেরাপি দিয়ে থাকবেন।
বিশেষ পরামর্শ
  • মধু: বিশেষ করে স্থানীয় মধু পোলেনজনিত অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • হলুদ: অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে।
  • আদা চা: শ্বাসতন্ত্রের অ্যালার্জির জন্য আরামদায়ক।
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেতন হওয়া ও নিয়মিত চিকিৎসা অনুসরণ করা জরুরি।

এলার্জি চুলকানি দূর করার ঔষধ

এলার্জি থেকে চুলকানি দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরণের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে সঠিক ওষুধ বেছে নেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নিচে সাধারণত ব্যবহৃত ওষুধগুলোর তালিকা দেওয়া হলোঃ
এলার্জি চুলকানি দূর করার ঔষধ এবং এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয়

  • সেটিরিজিন (Cetirizine): যেমন Zyrtec।
  • লোরাটাডিন (Loratadine): যেমন Claritin।
  • ফেক্সোফেনাডিন (Fexofenadine): যেমন Allegra।
  • ডাইফেনহাইড্রামিন (Diphenhydramine): যেমন Benadryl (ঘুম আনতে পারে)।
  • চুলকানি কমানোর জন্য চামড়ায় সরাসরি প্রয়োগ করা যায়, যেমন ডাইফেনহাইড্রামিনযুক্ত ক্রিম।
  • হাইড্রোকর্টিসন (Hydrocortisone) ক্রিম: হালকা চুলকানির জন্য।
  • গুরুতর চুলকানির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্ট্রং কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ক্যালামাইন লোশন: ত্বকের চুলকানি ও জ্বালাভাব কমাতে ব্যবহৃত হয়। এটি সানবার্ন বা ত্বকের অ্যালার্জির জন্যও কার্যকর।
  • অ্যান্টিপ্রুরাইটিক লোশন বা ক্রিম: মেনথল ও ক্যামফরযুক্ত ক্রিম (যেমন Sarna Lotion)।
  • ইমিউনোথেরাপি ওষুধ: যদি সাধারণ ওষুধ কাজ না করে বা এলার্জি তীব্র হয়, ডাক্তার নিচের থেরাপি দিতে পারেন। মন্টেলুকাস্ট (Montelukast): শ্বাসতন্ত্রের ও ত্বকের চুলকানির জন্য কার্যকর।
  • চুলকানি কমাতে বিভিন্ন ওষুধের মলম বা স্প্রে পাওয়া যায়।
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
  • এলার্জি চুলকানির কারণ যদি জানা না থাকে, তাহলে ডাক্তার বা ত্বক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
  • চুলকানোর স্থানে নখ না লাগানো বা বেশি ঘষা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি ত্বকের সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
  • গুরুতর অ্যালার্জির ক্ষেত্রে (যেমন অ্যানাফাইল্যাক্সিস), দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এগুলো ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করুন।

এলার্জি কত ধরনের হয়

এলার্জি মূলত চারটি প্রধান ধরণের হতে পারে, যা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এলার্জি প্রকারভেদ ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে এবং এলার্জেনের (যে পদার্থ এলার্জি সৃষ্টি করে) ধরন অনুযায়ী আলাদা হয়। নিচ কয়েক ধরনের এলার্জির সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
  • শ্বাসতন্ত্রের এলার্জিঃ এই ধরণের এলার্জি সাধারণত বাতাসে থাকা অ্যালার্জেনের কারণে হয় এবং এটি নাক, গলা ও ফুসফুসে প্রভাব ফেলে।
  • ত্বকের এলার্জিঃ ত্বকে বিভিন্ন পদার্থের সংস্পর্শে এলে বা খাবারের কারণে এ ধরনের এলার্জি হতে পারে।
  • খাদ্যজনিত এলার্জিঃ কিছু খাবার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিরিক্ত সক্রিয় করে তোলে।
  • ওষুধ এবং পোকামাকড়ের এলার্জিঃ পেনিসিলিন, স্যালফা-ড্রাগস, অ্যাসপিরিনের মতো কিছু ওষুধ এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
  • অ্যানাফাইল্যাক্সিস (জীবন-হুমকির এলার্জি) ঃ এটি একটি জরুরি অবস্থা, যা শরীরের পুরো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে ফেলে। যেকোনো এলার্জেনের কারণে এটি হতে পারে।
  • পরিবেশগত এলার্জিঃ পরিবেশে থাকা বিভিন্ন উপাদান এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
এলার্জি একাধিক প্রকারের হতে পারে এবং একই ব্যক্তির মধ্যে একাধিক ধরণের এলার্জি থাকতে পারে। এলার্জি সঠিকভাবে চিহ্নিত করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ।

এলার্জি থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায়

এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে এবং লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘরোয়া কিছু কার্যকর উপায় অনুসরণ করা যায়। তবে গুরুতর সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিচে এলার্জি থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলোঃ
  • যেসব জিনিস থেকে এলার্জি হয় (যেমন ধুলা, পোলেন, খাবার বা পশুর লোম), সেগুলো চিহ্নিত করে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
  • ঘর পরিষ্কার রাখুন এবং সপ্তাহে একবার বিছানার চাদর, পর্দা, এবং কভার ধুয়ে ফেলুন।
  • পোষা প্রাণীর লোম বা পশম নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  • ঘরে ধুলা জমতে না দেওয়ার জন্য নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  • ধুলা থেকে বাঁচার জন্য মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।
  • বায়ু শোধন যন্ত্র (এয়ার পিউরিফায়ার) ব্যবহার করুন।
  • লবণপানির (সালাইন সলিউশন) সাহায্যে নাক পরিষ্কার করলে শ্বাসতন্ত্রের এলার্জি কমে।
  • এটি পোলেন ও ধুলার প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
  • চুলকানি বা ফোলা স্থানে ঠান্ডা কাপড় বা বরফের প্যাক দিন। এটি আরাম দেয় এবং প্রদাহ কমায়।
  • স্থানীয় মধু খেলে পোলেনজনিত এলার্জি কমে।
  • প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেলে এটি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
  • হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য এলার্জি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • এক গ্লাস গরম দুধে এক চামচ হলুদ মিশিয়ে পান করুন।
  • আদার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিহিস্টামিন বৈশিষ্ট্য শ্বাসতন্ত্রের এলার্জি ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
  • আদা চা পান করতে পারেন বা কাঁচা আদা খান।
  • তুলসী পাতার চা শ্বাসতন্ত্র ও ত্বকের এলার্জির জন্য উপকারী।
  • তূলসীর রস পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
  • অ্যালোভেরা জেল ত্বকের চুলকানি ও র‍্যাশ কমাতে কার্যকর।
  • প্রতিদিন সকালে অ্যালোভেরা জুস পান করলে শরীরের ভেতর থেকে আরাম পাওয়া যায়।
  • গরম পানিতে সামান্য ওটমিল মিশিয়ে ত্বক ধুলে চুলকানি ও শুষ্কতা কমে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন, কারণ এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
  • ধূমপান ও ধোঁয়াযুক্ত স্থান এড়িয়ে চলুন।
  • খাদ্যাভ্যাসে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার (যেমন কমলা, লেবু) যোগ করুন।
  • এগুলো মেনে চললে এলার্জি থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা সম্ভব।
  • কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে
  • এলার্জি সৃষ্টিকারী খাবারের তালিকা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু নির্দিষ্ট খাবার সাধারণত অনেকের মধ্যে এলার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এগুলোকে কমন ফুড অ্যালার্জেন বলা হয়। নিচে সাধারণত যে যে খাবারের মাধ্যমে অ্যালার্জি হয়ে থাকে তা বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলোঃ
  • পিনাট (Peanut): এটি সাধারণ খাদ্য এলার্জির অন্যতম।
  • ট্রি নাটস (Tree Nuts): যেমন কাজু, আখরোট, আমন্ড, পেস্তা।
  • গরুর দুধে থাকা প্রোটিন (কেসিন এবং ওয়েহ প্রোটিন) অনেকের জন্য এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা এই ধরণের এলার্জিতে বেশি ভুগে।
  • ডিমের সাদা অংশে থাকা প্রোটিন বেশি এলার্জি সৃষ্টি করে, তবে ডিমের কুসুম থেকেও এলার্জি হতে পারে।
  • শেলফিশ (Shellfish): চিংড়ি, কাঁকড়া, লবস্টার থেকে এলার্জি হতে পারে।
  • ফিশ (Fish): যেমন টুনা, স্যালমন থেকে এলার্জি হতে পারে।
  • গমে থাকা গ্লুটেন ও প্রোটিনের কারণে অনেকের অ্যালার্জি হয়।
  • সয়া দুধ, সয়া সস বা সয়া বীজে থাকা প্রোটিন অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
  • বিশেষ করে সাইট্রাস ফল (কমলা, লেবু), স্ট্রবেরি, কিউই থেকে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • এছাড়াও চকোলেট বা কফিতে থাকা ক্যাফেইন অনেকের এলার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • শুকনো ফল যেমন খেজুর, কিশমিশ, ডুমুর থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।
  • প্যাকেটজাত খাবার, চিপস বা ক্যান্ডিতে থাকা প্রিজারভেটিভ বা কৃত্রিম রঙের উপাদান অনেকের মধ্যে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
যেসব খাবার থেকে এলার্জি হয়, তা সঠিকভাবে শনাক্ত করুন। খাদ্যের লেবেল পড়ে নিন, যাতে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন। গুরুতর সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যালার্জি পরীক্ষা করান এবং এপিপেন (EpiPen) রাখুন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমরা আপনাদের এই আর্টিকেলটি মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি যে, এলার্জি কি , এলার্জি কেন হয় , এলার্জির লক্ষণ , এলার্জি হলে কি কি সমস্যা হয় , এলার্জি হলে করণীয় , এলার্জি চুলকানি দূর করার ঔষধ , এলার্জি কত ধরনের হয় , এলার্জি থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায় এবং কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে সহ এলার্জি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।

তাই এই আর্টিকেলটি মাধ্যমে আপনাদের যদি কোন উপকার হয়ে থাকে বা আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে, আমরা আশা করব আপনারা আপনার বন্ধু-বান্ধবের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করবেন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Club Solver এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url